1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী” ----খোশবুর আলী (পর্বঃ “ষোল” )

উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী”                  

 ----খোশবুর আলী

তারিখঃ ২৬/০৫/২০২০

পর্বঃ “ষোল”

সমস্ত রাজশাহী জেলা জুড়ে দুর্ভিক্ষ চলছিল সেবারতাই গ্রামের মানুষ বিভিন্ন শহরের দিকে ছুটছিল জীবিকার তাগিদে। কোয়েল গ্রাম ও তার ব্যাতিক্রম নয়।  ইয়াসিন হাজীর প্রাচীরের সাথে বেড়ার ঘর করে বাস করে মনার এক ভাই এক বোন   আর মা। 

এরমধ্যে ইয়াসিন হাজী তার একজন মাসোহারা কামলার সাথে মনার বোনের  বিবাহ দিয়েছেন।মনার ভাইটা তখনও বিয়ে শাদি করেনি। গ্রামে খরার জন্য কোন কাজ কাম না থাকায়, মনার ভাই বিশু পাশের বাড়ির মোক্তার চাচার সাথে রাজশাহী শহরে রিক্সা চালাতে চলে গেল। মোক্তার চাচা আগে থেকেই রাজশাহী শহরে রিক্সা চালাতেন। এখুন মনার মা একায় হাজী সাহেবের বাড়িতে কাজ কাম করে, আর তিন   বেলা  পান্তা পানি খেয়ে কোন রকমে দিনানিপাত করতে লাগল।

এদিকে মনা কাউকে কিছু না জানিয়ে নাটোর চলে গেছে। মৌ প্রতি দিনের মত পরের দিন কলেজে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়ল। মৌ রিক্সার জন্য গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। একটা খালি রিক্সা দেখে মৌ হাঁক দিল- এই খালি—

রিক্সা ওয়ালা কাছে আসতেই, মৌ বলল রাজশাহী কলেজ যাবেন?

রিক্সা ওয়ালাঃ মুখের গামছা খুলে বলল, জি আপা, চলেন।

মৌ থতমত খেয়ে , একি মনা রিক্সা চালাচ্ছে কেন? নাকি আমাকে বোকা বানানোর জন্য রিক্সা নিয়ে এসেছে। গায়ে মলিন পোশাক, পরনে লুঙ্গি, পায়ে অক্ষয় স্যান্ডেল, মাথার চুল গুলো উস্ক খুস্ক। কিন্তু সেই একই হাসি, কন্ঠ-স্বর, চেহারা। তাহলে এটা কে? মৌ কিছু বলছেনা দেখে বিশু বলল-

বিশুঃ কি হৈল আপা? য্যাবেন না?  

মৌঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ। চল। বলে রিক্সায় উঠে বসল।

রিক্সা চলছিল রাজশাহী কলেজের দিকে। বিশুও তার গামছাটি আবার মুখে জড়িয়ে নিয়েছে। সে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে রাজশাহীতে এসেছে। এই সাত দিনে সে রিক্সা চালানো শিখেছে। রিক্সার হুড নামানো ছিল। যেতে যেতে মৌ অনেক কিছু ভাবছে। হঠাত দুটি মাস্তান ছেলে রিক্সার সামনে দাঁড়িয়ে রিক্সা থামাতে বলল। বিশু ব্রেক করল। তাঁরা মৌকে উদ্দেশ্য করে বলল- নেমে এসো সুন্দরী সেদিনের বোঝাপড়া করে নি তোমার সাথে।

বিশু কিছু না বুঝেই মুখের গামছা খুলে বলল ভাই কি সমস্যা?

ছেলেগুলো বিশুর মুখের দিকে দেখেই দিল দৌড়। বিশু কিছুই বুঝল না, তাই মৌ এর উদ্দেশ্যে বলল –

বিশুঃ আপা ঘটনা কি? ওরা আপনার কে হয়। এরকম কর‍্যা থাম্যালো, আবার হামার মুখের দিক দেহ্যা পাল্যালো।

মৌঃ তোমার নাম কি ভাই?

বিশুঃ বিশু।

মৌঃ বাড়ি কোথায়?

বিশুঃ তানোর থানা।

মৌঃ ও আচ্ছা, চল।

বিশু আবার রিক্সায় উঠে বসলো, রিক্সা চলতে লাগল রাজশাহী কলেজের দিকে।

গেটে পৌছালে মৌ রিক্সা থেকে নেমে বলল-

মৌঃ ভাড়া কত?

বিশুঃ হামি নতুন অ্যালঝি আপা, ভাড়া তো জানিন্যাদ্যান কত দিবেন।   

মৌ দশ টাকার একটা নোট বের করে দিল আর বলল---,

মৌঃ দুপুর একটায় আবার গেটে আসবেন , বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য। বাঁকিটা রেখে দেন।

বিশুঃ আচ্ছা আপা, বলে চলে গেল।

মৌ অনেক কিছুই ভাবছে, হুবহু একই রকম দেখতে শুধু ভাষাটা আলাদা মনে হচ্ছে। মনা কলেজে আসুক আজ দুপুরে মনাকে নিয়ে ঐ রিক্সায় বাড়ি যাব, তাহলেই বুঝতে পারব আসল ঘটনা।

এক দুই তিন করে চারটি ক্লাশই শেষ হল কিন্তু মনা কে সে ইংরেজী ও বাংলা ক্লসে দেখতে পেল না। তার ,মনে সন্দেহ হল। মনাই এসব করছে না তো?

ঠিক দুপুর একটার সময় ক্লাস শেষে মৌ কলেজ গেটের সামনে আসতেই সেই রিক্সা ওয়ালাকে দেখতে পেল। কিছু না বলে এসে রিক্সায় উঠে বসল, বলল- চল।

রিক্সায় কেউ কোন কথা বলল না, রিক্সা যথা সময়ে বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছাল।  মৌ রিক্সা থেকে নামতেই বিশু বলল,    -- যান আপা, ভাড়া ল্যাগবে না,  সকালেই তো ডবল দিলেন। তার পরেও মৌ তার ব্যাগ থেকে পাঁচ টাকার একটি নোট বিশুর হাতে দিয়ে বলল-

মৌঃ কাল থেকে প্রতিদিন আমাকে কলেজ নিয়ে যাবেন আবার নিয়ে আসবেন।

বিশুঃ ঠিক আছে আপা অ্যাসপনিবলে চলে গেল।

 

আজ মৌ এর মনটা বেশ খারাপ। সে ক্লাসে মনাকে পেলনা, আবার ঐ  রিক্সাওয়ালা কে? এসব প্রশ্ন সে সারাদিন ভাবতে থাকলো।

মৌ ঠিক বিকাল তিনটায় প্রায়ভেটের জন্য বের হল কিন্তু মনা নিতে এলো না। তাই সে আর প্রায়ভেটে গেল না।

প্রতিদিন মৌ বিশুর রিক্সায় কলেজ যাতায়াত করতে লাগলো, কিন্তু মনাকে ক্লাসে দেখতে পায় না। এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। মৌ লজ্জায় বাবাকে কিছু বলতে পারেনি। হোটেলে ফোন করে নি এমন কি বাসাতেও ফোন করে নি।

------------------------------

এদিকে বিশুর মায়ের হঠাত ভিশন জ্বর হল। ফলে সে আর কাজ কাম করতে  পারছে না। তাই সে কোন রকমে পাশের বাড়ির জব্বার ভায়ের নিকট গিয়ে    অনুরোধ করলো যে, তুমি শহরে গেলে মোক্তার ভায়ের কাছে আমার বিশু থাকে, তাঁকে বলে দিও ভাই,  সে যেন বাড়ি আসেজব্বার তার জমি সংক্রান্ত কেসের জন্য প্রতি মাসে শহরে যায়, সে বলল আমি মোক্তার ভাই যে যায়গায় থাকে আমি চিনি, কারন কয়েকবার সেখানে থেকেছি।

পরের দিন জব্বার শহরে গিয়ে মোক্তার ভাইকে জানালো যে বিশুর মায়ের খুব অসুখ তাঁকে বাড়ি যেতে বলেছে। বিশু ঐ সময় ট্রিপে ছিল। দুপুরে রিক্সা নিয়ে আসলে মোক্তার চাচা তার মায়ের খবর জানালো। বিশু বলল, চাচা-- আগামী কাল বাড়ি যাব ।

পরেরদিন বিশু খুব সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হল।

--------------------------

 

এদিকে মনার বাড়িতে আসা প্রায় সাতদিন হয়ে গেছে। ছোট বোনের বায়নায় একদিন একদিন করতে করতে সে সাতদিন কাটিয়ে দিয়েছে। তাই সে আবার কলেজের উদ্দেশ্যে ট্রেন উঠল।

---------------------------

বিশুর বাড়ি ফিরতে প্রায় বিকাল ৩ টা বেজে গেল। সে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল তার বাড়ির সামনে অনেক মানুষ। কাছে আসতেই একজন মহিলা বলল – ব্যাটা তুর মায়ের তাজা মুখটা আর দেখতে প্যালু ন্যা?

বিশুঃ মানে?

মহিলাঃ তুর মা মর‍্যা গেলঝে সকালে, তুর ক্যানে অপেক্ষা করছ্যে সবাই, এঘুনি জানাজা হবে, তুর বোন কান্নাকাটি করছে খুব, অক থামা, কারু কধা শুনছ্যে না ।

বিশু বড়িতে প্রবেশ করে দেখতে পেল তাঁর মায়ের মৃত দেহকে একটি খাটে  কাফন পরিয়ে রেডি করা আছে। বিশুর বোনের স্বামী সব কিছুর ব্যাবস্থা করেছে।

সে শেষবারের মত মায়ের মুখটা দেখে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। সেও তার বোনের সাথে কাঁদতে লাগল।

লোকজন বলতে লাগল তাড়াতাড়ি কর। আর রাখা ঠিক হবে না।

তাই সবাই ধরাধরি করে লাশ নিয়ে চলল গোরস্থানের দিকে।

জানাজা শেষে দাফন করা হল। দোয়া শেষে সবাই যে যার বাড়ি ফিরে গেল। বিশু ও ফিরে গেল বাড়িতে।

-------------------

সেদিন মনা ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমের মাঝে সে স্বপ্নে দেখল তাঁর একটি নিচের পাটির দাঁত পড়ে গেছে।

রাজশাহী স্টেশানে ট্রেন থামার পর মনার ঘুম ভাংল। সে মুখে হাত দিয়ে পরিক্ষা করে দেখলো তাঁর দাঁত ঠিক আছে কি না। দেখলো ঠিক আছে। তাহলে এমন স্বপ্ন দেখল কেন? সে ভাবলো মেসের পাশের রানি বাজার মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট থেকে জেনে নিব স্বপ্নের অর্থ কি?

 

স্টেশানে নেমে সে মেসে ফিরে গেল।

 

সেদিন মনা আর ক্লাসে বা প্রায়ভেটে গেল না। আটদিন পরে মেসে এসেছে রুমটা বেশ অপরিস্কার তাই পরিস্কার করার কাজে লেগে গেল।

 

মাগরীব নামাজের পর মনা রানি বাজার মসজিদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে  ছিল, নামাজ শেষে সব লোকজন বেরিয়ে গেল। সব শেষে বের হল ইমাম সাহেব। মনা সালাম দিয়ে বলল-

মনাঃ হুজুর আমার একটা স্বপ্নের তাবির জানতে চাই।

ইমাম সাহেবঃ বল বাবা কি স্বপ্ন দেখেছ?

মনাঃ হুজুর আমি ট্রেনে আসার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখন স্বপ্নে দেখলাম আমার একটা নিচের মাড়ির দাঁত পড়ে গেল। ঘুম থেকে জেগে দেখি কোন দাঁত পড়ে নি। সব ঠিকঠাক আছে।

ইমাম সাহেবঃ ওহ আচ্ছা। বাবা তুমি একথা আর কাউকে বলবে না।

মনাঃ ঠিক আছে বলব না।

ইমাম সাহেবঃ বাবা আমার মনে হয় তোমার কোন নিকট আত্মীয় মারা গেছে অথবা মারা যাবে। যে তোমাকে খুব ভালবাসে। অথবা অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার জানামতে এটুকুই পেলাম বাবা। তবে তা নাও হতে পারে, এটা একটা আনুমানিক ব্যাখ্যা।

মনাঃ ঠিক আছে হুজুর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

মনার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।  মেসে ফিরে গেল টেলিফোন রুমে। প্রথমে নিজের বাড়িতে ফোন করলো।

মনাঃ হ্যালো,

মাঃ হ্যালো , কে মনা? হ্যাঁ বাবা ঠিক মত পৌঁছেছ তো?

মনাঃ হ্যাঁ মা। বাড়ির সবাই ভালো তো?

মাঃ হ্যাঁ বাবা সবাই ভাল আছে, তুমিও ভাল থেকো।

মনাঃ হ্যাঁ মা তোমরা ও ভাল থেকো। বাই, বলে ফোন রাখলো।

 

এর পর ফোন দিল মৌদের বাড়িতে---  

--------চলবে---- আসছে আগামী পর্বঃ ১৭। সাথে থাকবেন আশাকরি।   

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।