উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী” ------খোশবুর আলী (পর্বঃ বার)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী”
------খোশবুর আলী
তারিখঃ ১২/০৫/২০২০
“বার”
তখন সন্ধ্যা ৬ টা। মনা রেডি হয়ে গেল খোকন চাচ্চুর বাড়ি যাবার জন্য। মনা আগে থেকেই চিনতো, খোকন চাচ্চুর বাড়িটা কোথায়। রাজশাহীতে আসার পর সে দূর থেকেই দেখেছে কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠেনি। আজ এ সুযোগে দেখে আসা যাবে।
গিফটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মনা বেরিয়ে পড়ল। বাড়িতে গিয়ে কলিংবেল বাজাবার প্রয়োজন হল না, কারণ খোকন চাচ্চু গেটেই ছিল। তিনি মনাকে স্বাগত জানিয়ে ভেতরে বসতে বললেন। সেখানে আরও কয়েকজন গেস্ট ছিল।
মনা সবাইকে সালাম দিয়ে চারিদিকে দেখে সোফার এক পাশে গিয়ে বসলো।
বাহির থেকে মনা বাড়িটা দেখেছে, আজ ভেতরে ঢুকে দেকে মনা অবাক হয়ে গেল। এই বাড়িটা অনেটা তাদের নতুন বাড়ির মত। সাজানো গোছানো চারিদিক। তারপরেও জন্মদিন উপলক্ষে আরও ভাল ভাবে সাজানো হয়েছে। ফার্নিচার গুলো বেশ দামি। তার সামনেই একটি বড় টেবিলে বড় একটি জন্মদিনের কেক সাজানো আছে। তার চার পাশে অনেকগুলো মোমবাতি বসানো আছে। মনা গুনে দেখলো সতেরটি। মনা মনে মনে ভেবেছিল চাচ্চুর মেয়ে হয়তো দশ বার বছরের হবে, কোন স্কুলে পড়ে হয়তো। কিন্তু সতেরটি মোমবাতি দেখে তার সেই ভুল ভাংল। তার মেয়ের বয়স নিশ্চয় সতের বছর।
ইতি মধ্যে আরও অনেক অতিথি আসলো। তাদের মধ্যে তার কলেজের কলা বিভাগের কয়েকজন মেয়েও ছিল। মনা ভাবল এদের হইতো আত্মীয় হবে, তাই এসেছে।
সন্ধ্যা ৭ টার সময় সব আত্মীয় স্বজনরা সেই ঘরে এসে জমায়েত হল। ভেতর থেকে চার পাঁচজন মেয়ে বেরিয়ে এল। তাদের মধ্যে বর্নিল সাজে সাজানো মেয়েটি মাথায় অনেকটা নতুন বউ এর মত ঘোমটা টেনে ছিল, সে তাদের মাঝে দাঁড়াল। সব মোমবাতি জ্বালানো হল। ঘরটি আলোকোজ্বল হতেই মনা দেখতে পেল , সাজানো মেয়েটিই হোল সেই মেয়ে, যে তাঁকে ফুল দিত।
মনা দেখে রীতিমত অবাক। তখন কেক কাটা হচ্ছিল। সবাই গাইতে লাগল “হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থ ডেয়ার মৌ, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ । মনার সেই চিরকুটের কথা মনে পড়লো। মৌ, হ্যাঁ, এই নামই তো ছিল। তাহলে এই মৌ কি, সেই মৌ। সে আমার খোকন চাচ্চুর মেয়ে। তাই তো বলি এত সাহস পায় কি করে? এসব ভাবতে ভাবতে মনা হতে তালি দিয়েই যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে সবার হাত তালি থেমে গেছে কিন্তু মনার থামেনি। তাই সবার দৃষ্টি মনার দিকে গিয়ে পড়লো।
এর মধ্যে মৌ সব মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিয়েছে। তাই মনার দিকে তাকিয়ে বলল, এবার থামেন হয়েছে তো।
মনা মৌ এর দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই ভাবছিল তাই লক্ষই করেনি সে হাত তালি দিয়েই যাচ্ছিল। মৌ এর কথায় সম্ভিত ফিরে পেয়ে থামল মনা।
মৌ কাটা কেকের এক টুকরা তার বাবা-মার মুখে দিল। খোকন মিঞা দেখলো মনা বেশ লজ্জা পেয়েছে, তাই মনাকে কাছে ডাকলেন, সেই সুযোগে মৌ আর এক টুকরা কেক মনার মুখে তুলে দিল, মনা কিছু না ভেবেই খেয়ে নিল।
খোকন মিঞা নিজ হাতে মৌ-এর মুখে এক টুকরা কেক তুলে দিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে হালকা নাস্তা খেয়ে সকল আত্মীয় স্বজন নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল কিন্তু খোকন মিঞা মনাকে রাতের খাবার খেয়ে যেতে বললেন। তাই মনা আর না করতে পারলো না। মনা সোফায় বসে রইলো।
কিচ্ছুক্ষনের মধ্যে ঘরটি পরিস্কার করা হল। মৌ তার বাবা, মা এসে বসল সোফায় । খোকন মিঞা বলল-
খোকন মিঞাঃ তোমরা তো একই কলেজে পড়, দেখা হয় তোমাদের।
মৌঃ হ্যাঁ বাবা।
মনাঃ বাংলা আর ইংরেজী ক্লাসের সময়।
খোকন মিঞাঃ পরিচয় হয়েছে কি?
মৌঃ হ্যাঁ বাবা। ইংলিস স্যারের প্রাইভেট ক্লাসে।
খোকন মিঞাঃ ওহ, আচ্ছা। পড়াশোনা কেমন চলছে তোমাদের? একই সঙ্গে যখন প্রায়ভেট পড়, তখন মনার কাছে একটু সাহায্য নিও, মনা খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।
মনাঃ না, চাচ্চু। ও খুব সাহসি মেয়ে।
খোকন মিঞাঃ সাহসি মানে?
মনাঃ না মানে,---- পড়ালেখায় বেশ ভাল।
খোকন মিঞাঃ একেবারে মন্দ না, তবে তোমার মতো না।
মনাঃ জি চাচ্চু, প্রয়োজন হলে অবশ্যয় সাহায্য করব, অথবা আমিও সাহায্য নিতে পারি।
খোকন মিঞাঃ খুব ভাল কথা। তোমরা এখন কথা বল, দেখি আমরা খাবার দাবার এর ব্যাবস্থা করি। বলে মৌ-এর বাবা মা উঠে গেল।
মনা মৌ এর সাথে একান্তে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিল, পেয়েও গেল।
এবার পাশে রাখা গিফটের প্যাকেটটি মৌ এর দিকে বাড়িয়ে দিল মনা।
মৌঃ কি এইটা?
মনাঃ খুলে দেখুন।
মৌঃ আমাকে আপনি করে কথা বললে, নেব না।
মনাঃ কি বলব।
মৌঃ তুমি করে বলবেন, আপনি আমার বয়সে বড়। তাছাড়া আপনার বাবা আর আমার বাবা বন্ধু, সেই সুত্রে আপনি আমি ভাই বোন।
মনাঃ ও তাই। একটু পরে-
মনাঃ ঠিক আছে নাও। আর এটার মত জীবন গড়ার চেষ্টা করিও।
মৌ হাতে নিয়ে মোড়ক খুলে দেখল, বিবি খাদিজা (রাঃ) এর জীবনি। তাই সে বলল আপনার এই উপদেশ জীবনে পালন করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করব।
মনাঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মৌঃ বলে ফেলুন।
মনাঃ তুমি আমার সম্পর্কে কতটুকু জান?
মৌঃ মোটামুটি।
মনাঃ মোটামুটি মানে?
মৌঃ এই ধরুন আপনি আমার বাবার বন্ধুর ছেলে, আপনার পিতা বড়লোক, নাটোরে বাড়ি, খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট এসব আর কি।
মনাঃ এটাই আমার জীবনের সব কিছু না।
মৌঃ তাহলে?
মনাঃ আসলে যাকে তুমি আমার বাবা হিসাবে চেন সে আমার বাবা নয়। আমি এই রাজশাহী জেলার কোন এক গ্রামের খুব গরিব দিন মজুরের ছেলে ছিলাম। রাজশাহী রেল স্টেশানে আমি আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন আমার বয়স আট নয় বছর। আমি আজও তাঁকে এবং আমার পরিবার কে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মনার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
ছোট্ট বেলার সেই ডাঙ্গুলি খেলার ঘটনাটা মনা মৌকে শোনালো। শুনে মৌ এর মনেও খুব কষ্ট হল। সেই সাথে মনার প্রতি তার ভালবাসা আরও বেড়ে গেল।
মনা বোঝাতে চাইল তার পক্ষে কোন মেয়ের সাথে রিলেশান করার মত তার কোন ইচ্ছা নাই, যতক্ষন না তার আসোল বাবা-মা কে খুঁজে পায়।
মনা ভাবল- মৌ হয়তো সব কিছু শুনে আর আমার পিছু লাগবে না।
কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ালো, মৌ আরো আসক্ত হয়ে পড়লো মনার প্রতি।
মৌঃ আমার ভাল লাগে শুধু আপনাকে এতে আপনার বাবা-মা যাই হোক না কেন, তাতে আমার কোন অসুবিধা নাই।
মনাঃ কাল থেকে আর আমাকে কোন ফুল দেবে না।
মৌঃ দেব দুইটা করে।
মনাঃ কেন? দুইটা কেন?
মৌঃ কারণ বলা যাবে না, এটা বুঝে নিতে হবে।
মনাঃ আমি তো অত কিছু বুঝি না, আমার ভাল ভাবে পড়ালেখা করতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, তারপর ভাবা যাবে, তার আগে নয়।
মৌঃ ওকে, আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যে মৌ এর মা এসে তাদের কে ডাইনিং টেবিলে খাবারের জন্য ডেকল।
তাঁরা উঠে গেল খাবার ঘরে। অনেক পদের রান্না। মনাও তেমন পেটুক ছেলে নয়। সে নিজের সাধ্য মত খেয়ে চাচা- চাচিকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিল।
-------------------------
চলবে----
আসছে আগামী পর্বঃ ১৩। সাথে থাকবেন আশাকরি।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন