1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

উপন্যাস “ডাঙ্গুলী” ----খোশবুর আলী ( পর্বঃ- “পনের” )

উপন্যাস “ডাঙ্গুলী”

----খোশবুর আলী                

তারিখঃ ১৭/০৫/২০২০  

পর্বঃ- “পনের”

মেসে পৌঁছে মনা অনেক কিছুই ভাবতে লাগল। সবাই বলছে আমি মৌদের বাসায় থাকি, বাবা-মাও বলছে, না থাকলে যদি পরে কোন খারাপ কিছু হয়ে যায়, তখন সবাই আমাকে দোষারোপ করবে।

বাড়ি ছেড়ে মনা রাজশাহীতে প্রায় এক মাসের মত অতিবাহিত করায় তাঁর আর ভাল লাগছে না। বারবার বাড়ির কথা মনে হচ্ছে।তাই মনা সিদ্ধান্ত নিল আগামী সপ্তাহে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি যাবে

বৃহস্পতিবার হাফ ডে, মনা কলেজ থেকে ফিরে মেসে গিয়ে কাউকে না জানিয়ে টেলিফোন রুমে গিয়ে বাড়িতে ফোন দিল। মা ফোন ধরল---

মনাঃ হ্যালো , আসসালামুয়ালাইকুম।

মাঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কে মনা।

মনাঃ হ্যাঁ, মা।

মাঃ কি খবর বাবা?

মনাঃ এমনি মা, আমি কদিনের জন্য বাড়ি আসতে চাই , আপনাদের ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা।

মাঃ ঠিক আছে বাবা, আজ তো বৃহস্পতিবার তোমার ক্লাস শেষে বাসে করে চলে এস।

মনাঃ না মা, আমি ট্রেনে যাব ভাবছি।

ট্রেনের কথা শুনে মিনার মন হঠাত কেমন যেন করে উঠল। তাই তাড়াতাড়ি মনাকে বলল---

মাঃ ট্রেনে কেন বাবা? বাসে এসো।

মনাঃ অনেকদিন ট্রেনে চড়িনি মা, তাই শখ হোল।

মাঃ কিন্তু বাবা খুব সাবধানে, কারো কিছু খাবে না, নিবে না।

মনাঃ আচ্ছা মা। বলে ফোন রেখে দিল।

মনা খুব তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেরে তাঁর ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিল।এবং কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

স্টেশানে পৌঁছে নাটোরের টিকিট কেটে সেই বই এর দোকানদারের নিকট গিয়ে  বসল, আর ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

দোকান্দারঃ তুমি বেশ কয়েকদিন এদিকে আসনি যে?

মনাঃ হ্যাঁ দাদু, আসা হইনি। মানে বিকেলে একটা প্রায়ভেট পড়ছি তো তাই।

দোকান্দারঃ ও আচ্ছা। তা আজকে সাথে ব্যাগ নিয়ে কেন?

মনাঃ হ্যাঁ দাদু, আজ ট্রেনে বাড়ি যাব মনে করে এলাম।

দোকান্দারঃ বাবা-মার কথা মনে পড়েছে বুঝি?

মনাঃ হ্যাঁ দাদু। আসা প্রায় এক মাস হল। তাদের ছেড়ে এতোদিক কোথাও থাকিনি।

দোকান্দারঃ ঠিক আছে যাও, কিন্তু ট্রেনের সময় তো প্রায় আধাঘন্টা দেরি হবে।

মনাঃ স্টেশান মাস্টারও তাই বলল। আচ্ছা দাদু, সেদিন যে কথাটা বলেছিলাম, সেটার ব্যাপারে কিছু মনে পড়েছে।

দোকান্দারঃ হ্যাঁ, তুমি যাবার পরে আমার নাতি আমাকে খাবার দিতে এসেছিল। সেই নাতিকে দেখে আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল। কারন ঐদিন আমার ঐ নাতি হয়েছিল।

মনাঃ ঘটনাটা কি দাদু বলেন তো?

দোকান্দারঃ হ্যাঁ সেদিন আনুমানিক বিকাল সাড়ে তিনটার সময় নাটোর গামী ট্রেনের নিচে এক অচেনা মানুষ কাটা পড়ে। তাঁর হাতে দুটি পাওরুটি আর চারটি কলা ছিল। গায়ের জামাটা রক্ত মিশে বোঝা যাইনি কেমন রঙ্গের ছিল, তবে সেটার একটু কোনা দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো নীল রঙের হবে।ফ্যায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে লাশটা নিয়ে গেছে, এর পর আর কিছু জানিনা।

মনার অজান্তেই দু’চোখ বেয়ে অশ্রু বেয়ে আসতে চাইছিল, কিন্তু মনা অন্যদিকে মুখ ফিরে রুমাল দিয়ে মুছে নিল। 

দোকান্দারঃ তোমার মনটা মনে হয় খারাপ হয়ে গেল। চায়ের কথা বলি?

মনাঃ হ্যাঁ দাদু আজ আমি আপনাকে চা খাওয়াব। বলে মনা পাশের চায়ের স্টলের বয়কে দু’কাপ চা দিতে বলল।

চা খাওয়া শেষ হতেই রাজশাহী কোর্ট স্টেশান থেকে ট্রেন এসে ভিড়ল ৩নং প্লাটফর্মে। তাই মনা দোকানদার কে বিদায় জানিয়ে চায়ের বিলটা পরিশোধ করে ট্রেনে উঠে বসল। ট্রেনে প্রচুর ভিড়। মনা ইচ্ছা করেই ফাস্ট ক্লাসের টিকেট কাটেনিকোন রকমে একটা ব্রেঞ্চে একটু জায়গা করে নিল। ট্রেন ছুটে চলল নাটোর অভিমুখে।

 

এদিকে রাজশাহী জেলার প্রতন্ত গ্রাম অঞ্চলে পরপর দুই বছর বর্ষায় বৃষ্টি না হওয়ায় দুর্ভিক্ষ চলছিল বৈদ্যপুর গ্রামেও। তাই দলে দলে মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরের দিকে ছুটছিল। সেই খেটে খাওয়া দিন মজুর মানুষগুলির জন্যই ট্রেনে এত ভিড়।

মনা বসেছিল আর তাঁর চারি পার্শে গাদাগদি করে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল।

প্রতিটা স্টেশানে যত মানুষ নামছে তাঁর চেয়ে উঠছে আরও বেশী।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর টিকিট চেকার এল, টিকিট চেক করতে। অনেকের কাছেই টিকিট নাই, তাই জরিমানা করছে তাদের।

মনার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল এক চোখ অন্ধ একটি ছেলে। পরনে পুরাতন লুঙ্গি, গায়ে ছেড়া শার্ট, মাথার মাথইলটা বাম হাতে ধরে, কমরে গামছা বাঁধা। দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে গরিব কামলা কোথাও কাজ করতে যাচ্ছে।

চেকার তাঁর কাছে টিকিট চাইল,

ছেলেটিঃ টিকিট নাই ।

চেকারঃ পঞ্চাশ টাকা দে, জরিমানা বিশ আর ভাড়া ত্রিশ।

ছেলেটিঃ টাকা নাই।

চেকার টাকা নাই মানে? টাকা নাই তো গাড়িতে উঠেছিস কেন?

ছেলেটিঃ পেটের দায়ে সার, কি করব।

চেকারঃ আমি অতো কিছু বুঝি না টাকা দে।

ছেলেটি কথা বলে না, তাই চেকার আবার বলল—

চেকারঃ কি হল কানে কথা যায় না, না স্যারকে ডাকব।

ছেলেটিঃ টাকা নাই সার।

চেকার অমনি ছেলেটির গালে ঠাশ করে চড় মেরে দিল, দেখে মনার খুব রাগ হল।

মনাঃ এই ভাই ওকে মারলে কেন?

চেকারঃ তাতে তোমার কি? তুমি দেবে নাকি তাঁর টাকা?

মনাঃ টাকা দিলে ঐ চড় টা ফেরত নিতে হবে, নিবে তো?

চেকারঃ চড় নিব মানে?

মনাঃ মানে খুব সোজা। আপনি টাকা পাবেন, আপনাকে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু সেই চড়টা আপনার গালে মারা হবে। রাজি?

চেকারঃ ঠিক আছে দাঁড়া আমি স্যারকে ডাকছি।

বলে সে টিটিকে ডাকতে চলে গেল। সে মনার বয়সেরই ছেলে। মনা ছেলেটিকে বলল তোমার বাড়ি কোথায়?

ছেলেটিঃ তানোর থানা।

মনাঃ যাবে কোথায়?

ছেলেটিঃ নাটোর, ভাটায় কাজ করতে।

ততক্ষনে চেকার টিটিকে ডেকে নিয়ে এসেছে।

চেকারঃ স্যার, এই ছেলের কাছে টিকিট নাই আবার ফাইনের টাকাও নাই।

মনাঃ স্যার, টাকা নাই বলে ওর গালে চড় মেরেছে, আবার টাকা কেন?

টিটিঃ তুমি চড় মেরেছ?

পাশের লোকজন সবাই বলল হ্যাঁ, স্যার, মেরেছে।

টিটিঃ আমি সরি ভাই। কিন্তু ট্রেনে টিকিট ছাড়া ভ্রমন করা বে-আইনি। আর আমাদেরকে সরকার সে জন্যই রেখেছেন। এটা আমাদের ডিউটি।

মনাঃ তাই বলে যাত্রিকে মারবেন কেন? আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন?

টিটিঃ বললাম তো সরি। এবার আপনার টিকিট টা দিন তো।

মনাঃ এই নেন। বলে পকেট থেকে টিকিট আর পঞ্চাশ টাকা বের করে দিল।

টিটিঃ  টাকাটা রাখুন।

মনাঃ কেন জরিমানা নিবেন না?

টিটিঃ না। বলে টিকিটে একটা স্বাক্ষর করে মনার হাতে ফেরত দিলেন।

মনা টিকিট টা পকেটে রাখল আর পঞ্চাশ টাকার নোটটা সেই অন্ধ ছেলেটার দিকে বাড়িয়ে বলল-

মনাঃ এটা রাখ, তোমার বিপদ আপদে কাজে দিবে, অথবা কিছু খেয়ে নিও।

ছেলেটার চোখ তখনও ছলছল করছিল, সে হাত বাড়িয়ে টাকাটি নিল, কিন্তু কোন কথা বলল না।

তোমরা কয়জন আছ?

ছেলেটিঃ আটজন।

মনাঃ তোমাদের আর কোন ভয় নাই। কে কে তোমার সাথি?

ছেলেটিঃ এড্যা, এড্যা, বলে একে একে সবাইকে দেখিয়ে দিল।

মনার মুখগুলি কেমন চেনা চেনা লাগল , কিন্তু মনে করতে পারল না। তাই  সবার উদ্দেশ্যে বলল—

আমার মনে হয় তোমাদের নিকট তেমন টাকা পয়সা নাই। কিছু খাও নি তাই না?

ওরা বললঃ আছে অল্প।

এমন সময় হকার এই পাওরুটি বলে হাঁক ছেড়ে যাচ্ছিল। মনা কাছে ডাকল। আট জনকে আটটা পাওরুটি দিতে বলল। বলল- কত হোল?

হকারঃ ষোল টাকা স্যার, পনের দিলেই হবে।

মনা বিশ টাকার নোট দিলে হকার পাঁচ টাকা ফেরত দিল, টাকাটি পকেটে রেখে সবাই কে খেতে বলল। তাঁরা যখন খাচ্ছিল মনা তখন মনের অজান্তে যেন তৃপ্তি পাচ্ছিল, আহারে গরিব মানু্‌ষ, কত অসহায় এরা।কিন্তু মনা কিছুতেই মনে করতে পারলোনা যে, এরাই তার গ্রামের সেই ছেলে গুলি যারা মনাকে ঘর ছাড়া করেছিল। মনা হেলান দিয়ে বসে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি। নাটোর স্টেশানে ট্রেন থামলে, হুড়োহুড়ি করে লোকজন নামতে লাগলে মনার ঘুম ভাংল। মনা বাহিরে তাকিয়ে দেখল চারিদিকে বেশ অন্ধকার নেমেছে তবুও তার চেনা সেই নাটোর স্টেশানবিজলী বাতির হালকা আলোতেও  চিনে ফেলল, তাই সেও নেমে পড়ল। সেই ছেলেগুলি আগেই নেমে কথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে  মনা দেখতে পায়নি। তাই রিক্সা ডেকে মনা বাড়ির পথে চলল।   

--------------------

চলবে--    আসছে আগামী পর্বঃ ১৬আশাকরি সাথে থাকবেন।   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।