1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী” --খোশবুর আলী (শেষ পর্বঃ)

শেষ পর্বঃ

উপন্যাসঃ “ডাঙ্গুলী”

--খোশবুর আলী

ধুলা উড়িয়ে বীর দর্পে বীপ গাড়িটি এসে থামল কোয়েল গ্রামের হাটপাড়ার ইয়াসিন হাজীর বাড়ির সামনে। সবাই ভাবল পুলিশ টুলিশ হইতো হাজীর বাড়িতে এল  কোন বিষয়ে তদন্ত করার জন্য। তাই গ্রামের অনেক মানুষ ছেলে বুড়ো সবাই এসে হাজির হলকিন্তু গাড়ি থাকে বৈতপুরের একজন মানুষ নামতে দেখে তারা আশ্চর্য্য  হল। এর পরে নামলো মনা। এবার তারা বলাবলি শুরু করল, ঘটনা কি? ইনি আবার কে? হাজী সাহেব বেরিয়ে এলেন, সামনে আসতেই মনা এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলেন। মোসাফা শেষে হাজী সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন-

হাজী সাহেবঃ আপনি কে? চিনলাম না তো বাবা।

মনাঃ আমাকে তুমি করে বলেন চাচা। আমি আপনার ছেলের মত।

হাজী সাহেবঃ তা কি মনে করে এলে বাবা?

মনাঃ উনাকে চিনেন চাচা।

হাজী সাহেবঃ হ্যাঁ, উনি তো বৈতপুরের মানুষ।

মনাঃ চাচা, উনি আজ থেকে ঊনিশ বছর আগে কয়েকটা দুঃখী মানুষ আপনার বাড়িতে রেখে গেছিলেন, তারা কোথায়।

হাজী সাহেবঃ আমার কাছে বুলছ ক্যান  বাবা? আমার বুলতে কিছুই নাই,   সবই আল্লাহর। ওরা আল্লাহর রহমতেই আছে। তুমি বিশু, বিশুর মা আর বোনের  কথা বুলছ তো? ঐযে বেড়ার ঘরটা, ওরা উটে থাকে। তবে পাঁচ ছয় বছর  আগে  বিশুর মা মার‍্যা গেলঝে। তা ওরে  ব্যাপারে কোন সমস্যা হলঝে নাকি?   

মনাঃ না চাচা, কোন সমস্যা নয়, আমি বিশুর হারিয়ে যাওয়া বড় ভাই

হাজী সাহেবঃ ওহ আচ্ছা। আরে তুরা দাঁড়ায়্যা কি দেখছস, বিশু আর    নুরজাহানেক ডাক , ওরে হারায়্যা যাওয়া ভাই অ্যালঝে । অ্যাসো অ্যাসো বাবা ইটে ব্রেঞ্চটাত বস। বস্যা কধা বুলি      

নুরজাহান বাড়ির ভেতর কাজে ব্যাস্ত ছিল, সে এক ছেলের মুখে শুনেছে কেউ একজন হাজী সাহেবের বাড়িতে এসেছে জীপ গাড়ি নিয়ে। কিন্তু সেটাই যে তার  হারিয়ে যাওয়া ভাই ভাবতেও পারেনি। পারুলের মা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল- নুরজাহান সিগগির চ তুর হ্যারায়্যা যাওয়া ভাই অ্যালঝে।

নুরজাহান  শুনে তো জ্ঞান হারানো অবস্থা। ওদিকে বিশুও কোন এক জনের মুখে শুনে ইতি মধ্যে ছুটে এসেছে।

মনাকে জড়িয়ে ধরে বিশু কান্নাকাটি করছে। নুরজাহান ছুটে এসে দুই ভাইকে কাঁদতে দেখে সেও কেঁদে ফেলল। ফলে মনা সহজেই চিনে ফেলল এটাই তার বোন। বিশুকে ছেড়ে নুরজাহান্নের মাথায় হাত রাখতের নুরজাহান ভাইয়ের বুকে মাথা গুজে কাঁদতে থাকলো।

সবাই সান্তনা দিতে লাগল, যাক আর কান্দাকাটি কৈরনা, শ্যাষ পর্যন্ত পাওয়া  গেঝে  তো?   

মনা তার দুই পার্শে তার ভাই বোনকে বসিয়ে নিলেন। সবাই মনার হারিয়ে যাবার ঘটনা শুনতে চাইল। দাঁড়িয়ে থাকা মহিলারা তাদের আঁচলে চোখ মুছে নিল। সবাই গোল হয়ে ঘিরে ধরেছে তাদের।

হাজী সাহেব সবাইকে বসতে বললেন।

মনা তার বাবার হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া পর্যন্ত সকল ঘটনা খুলে বলতে বলতে সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেল।

হাজী সাহেব বললেন_ বাবা, শহর থ্যাক্যা অ্যালঝেন । দুহুর বেলা কিছু খাওয়া হইনি তুমার। আর তুমার  জীবনের ইতিহাস শুনতে হামরা  এতোই বিভোর ছিনু যে, তুমার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ভুল্যাই বস্যা আছি।     

এর পর নুরজাহান কে বললেন যাও মা, ভিতরে জ্যায়া তুমার চাচীক বুল্যা নাস্তার ব্যাবস্থা করোছাওয়ালের মুখটা কেমন শুক্যায়া গেলঝেনুরজাহান উঠে গেলে  মনাকে চাপকলে হাত পাঁ ধুয়ে নিতে বললেন। বিশুকে বললেন-- যা কল চ্যাপ্যা দে।  

মনা বলল- চাচা থাক কোন কিছু করতে হবে না গাড়িতে আমার খাবার আছে। মনা ড্রাইভারকে খাবারের ব্যাগটা বিশুর হাতে দিতে বললেন।  

হাজী সাহেবঃ সেকি বাবা, অ্যাজ তুমি হামার মেহমান। 

মনাঃ ঠিক আছে চাচা, মেহমানদারী না হয় পরে করবেন। আমার খাবার গুলো তো নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া আপনি আমার বাবার মত করে মা, বোন , ভাইকে দেখা শোনা করেছে এতোদিন। এটাই তো সবচেয়ে বড় মেহমানদারী।

হাজী সাহেবঃ হ্যামি কিছুই করিনি বাবা, সব আল্লাহর ইচ্ছায় হৈলঝে

মনাঃ কিন্তু আপনি তো উছিলা ছিলেন।

হাজী সাহেবঃ তা হইতো ছিনু কিন্তু বাবা এতদিন পর যখন তুমাক কাঝে  প্যানু তঘন অ্যাজ  আর ছ্যাড়ছি না , হামার ইটে অ্যাজ থ্যাকা আগামী ক্যাল যাইও

মনাঃ কিন্তু আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করবেন, আর অফিসের নিয়ম অনুযায়ী কোথাও থাকা ঠিক না, রাত দশটা হলেও আমাকে অফিসে পৌঁছাতে হবে। তাছাড়া বৃষ্টি হলে গাড়ি চলবে না। আকাশের ভাবটা ভাল লাগছে না।

আপনাকে একটা কথা বলে রাখি চাচা, আমি যদি আমার ভাই, বোনকে নিয়ে যায় আপনি কিছু মনে করবেন না তো?

হাজী সাহেবঃ সেকি বাবা? তুমি তুমার ভাই-বোনেক লিয়্যা য্যাবেন এড্যাত হামার মুনে করার কিছু নাই, বরং তারা এতদিন হামার কাছে আমানত ছিল  তুমাক বুঝায়্যা দিতে প্যারলেই তো  হামার ভাল ল্যাগবে।  

মনাঃ আপনি খুবই ভাল মানুষ চাচা। আপনার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না। আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েন চাচা।

হাজী সাহেবঃ মাফ ল্যাওয়্যার কিছু নাই  বাবা। তুমরা ভাল থ্যাকো হামি এডাই দোয়া করি তুমারে কারনে

নুরজাহান ভেতরে খাবার রেডি করে ডাকতে এল, এবার মনা, ড্রাইভার, বিশু, হাজী সাহেব সবাই ভেতরে চলে গেলেন খাবার খেতে। এর মধ্যে নুরজাহানের স্বামী বিল্লাল আসলে মনা তাকেও পাশে বসিয়া নিলেন।

খাওয়া শেষে মনা সকলের নিকট থেকে অনেক ভাল বাসা আর দোয়া নিয়ে অফিসের অভিমুখে রওয়ানা হল।

 

গাড়ী তানোর পৌঁছাতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেল। সেখান থেকে কাঁচা রাস্তা শেষ। পাকা রাস্তা পেয়ে গাড়ি দ্রুত চলছিল। হারদর বিলের মাঝখানে রাস্তা এক যায়গা ভাঙ্গা ছিল। সেখানে গাড়ী ব্রেক করেছিল ড্রাইভার।

ঠিক এমন সময় রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে দুই পাশ থেকে দুইজন এবং সামনে পেছনে আরো দু’জন করে চার জন মিলে মোটটি ছায়া শরীর গাড়ীটিকে ঘিরে  দাঁড়াল। ড্রাইভার বিপদ বুঝতে পেরেছিল। বলল স্যার আমাদেরকে ডাকাতরা ঘিরে ধরেছে। এখুন কি করা যায়?

মনা গাড়ির সিটে তখনও বসে থেকে আল্লাহর নাম জঁপছিল।

একজন ড্রাইভারের কলার ধরে গাড়ি থেকে নামালো। বলল কি আছে বের কর।

ড্রাইভার কিছু নাই বললে তারা নিজেরাই তাঁকে সার্চ করতে লাগল।

এবার কেউ একজন গাড়ির ভেতরে টর্চের আলো ফেলে মনাকে দেখে চিনে ফেলল। বলল নাম শালা আজ তোকে বানাচ্ছি। সেই পাঁচ বছর আগের হিসাবটা আজ মিলিয়ে নিব। মনার মনে পড়ল সেই কলেজ লাইফের কথা। মৌ এর হাত ধরায় মনা যাকে ঘুশি মেরেছিল সে এখুন তাহলে রাস্তায় ডাকাতি করে। মনা মনে মনে সাহস এনে বলল ও তুমি, এখুনও তাহলে ভাল হওনি?

বলেই মনা গাড়ির দরজা খুলে নেমে দাঁড়াতেই ড্রাইভারকে ছেড়ে সবাই মনার  দিকে এল। ওদের দলনেতা মনার কন্ঠ শুনে চমকে উঠেছিল। বলল এই সর  দেখি, বলে একজনকে সরিয়ে মনার সামনে এল। মনার মুখে টর্চের আলো  ফেলে দেখেই বলল- এই তোরা কাকে ধরেছিস?  কিন্তু মনা তাঁকে চিনতে না পারলেও তাঁর কন্ঠ বুঝে ফেলেছে। তাই বলল--  ও তুমি জয়নাল না? কলেজে আমার সাথে পড়তে।

দলনেতাঃ হাঁ ভাই আমি জয়নাল, কি করব ভাই। কলেজে চারবার পরিক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারি নি। বেকার ছেলে বাড়িতে থাকি বাবা-মা সারাদিন বকাবকি করে কোন ইনকাম করতে পারি না। তাই এই পথে নেমেছি। কিক্তু  আজ আপনার সাথে দেখা হবে বুঝতে পারিনি। ভাই মাফ করবেন, কলেজ জীবনে আপনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন, আমার বাবা বারবার পরীক্ষায় ফেল করতাম বলে পরীক্ষার ফি দিত না , আপনি দিতেন, আপনার ঋণ কোনদিন ভুলতে পারবো না।

এই তোরা ভায়ের কাছে মাফ চেয়ে নে।

আগের ছেলেটি বলল, বস, আমার পুরনো হিসাব ছিল তার কি হবে।

জয়নালঃ আমি যা বললাম তাই কর, তা না হলে তোর দাঁত একটাও থাকবে না।

অগত্যা ছেলেটি এসে বলল স্যার মাফ করে দিবেন।

মনাঃ তোমরা আজ থেকে যদি ভাল হয়ে যাবার জন্য কথা দাও। তোমাদের আমি কাজের ব্যাবস্থা করে দিতে পারি । বলে পকেট থেকে একটি একশ  টাকার নোট বের করে বলল- এই টাকাটা তোমরা রাখ, তোমাদের কয়েকদিনের পকেট খরচ হয়ে যাবে, আর জয়নাল তুমি আমার অফিসে যোগাযোগ করবে।  দেখি তোমাদের জন্য কিছু করতে পারি কি না। মনা এবং ড্রাইভার গাড়িতে বসলে তারা সকলে ঠেলে গাড়ি ভাঙ্গা থেকে তুলে দিল, ফলে গাড়ী আবার পুরোদমে চলতে লাগল।

 

মনাকে ড্রাইভার খোকন মিঞার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি অফিসের গ্যারেজে নিয়ে চলে গেলে মনা কলিংবেল টিপলেন।

মনা যখন বাসায় প্রবেশ করল তখন রাত প্রায় দশটা। তারা সাধারনত এসময়ই রাতের খাবার খায়। মনা কাউকে আজকের ঘটনা গুলির কিছুই বলল না। সে অন্যান্য দিনের মত খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল।

------------------

পরের দিন সকালে মনা তার বাবাকে ফোন করে তাঁর গত কালের ঘটনা শুনালো। কিন্তু ডাকাতদের ব্যাপারে কিছু বলল না।

মনা তাঁর বাবাকে আরো কিছু বলতে চাইছিল, বুঝতে পেরে সোহেল চৌধুরী বলল, তুমি তাদেরকে নিয়ে এলেনা কেন?

মনাঃ বাবা, আপনাকে না বলে কি করে আনি।

সোহেল চৌধুরীঃ ওরা গ্রামে আমার মনে হয় খুব ভাল নাই। তুমি ওদেরকে নিয়ে আস, আমার মিলে অনেক লোক কাজ করে তারাও না হয় করবে।

মনাঃ আমি সেটাই বলতে চাইছিলাম বাবা। আমি এ সপ্তাহেই তাদেরকে নিয়ে আসব।

সোহেল চৌধুরীঃ ঠিক আছে। তাই কর। আমি তোমার মাকে সব জানাচ্ছি।

মনাঃ ওকে বাবা। বাই। বলে ফোন রাখল।

-------------------------

এর মধ্যে এক বছর গত হয়েছে। মনার ভাই বিশু এবং বোনে জামায় বিল্লাল এখুন সোহেল চৌধুরীর চালের মিলে কাজ করে। আর সকলে মিলে  তাদের সেই প্রাশাদ তুল্য বাড়িতে থাকে। মনা এবং মৌ এর বিশাল ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে। চাকুরীর সুবাদে মনাকে মৌদের বাড়িতে থাকতে হয়। তবে প্রতি শুক্রবারে তারা নাটোর গিয়ে ছুটির দিনটা সকলে মিনে হৈ হুল্লোড় করে কাটাতে লাগল।  

 

একদিন চৈত্রের দুপুরে মনা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসল। সাধারনত এ সময় মনা বাড়িতে আসে না। মৌ দেখে খুশি হল বটে কিন্তু মনার মুখের দিকে দেখে বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। তাই মনাকে জিজ্ঞাসা করল---

মৌঃ আপনার কি শরীর খারাপ ?

মনাঃ না, তবে ভাল লাগছে না আমার। সবকিছু যেন একঘেঁয়েমি লাগছে।

মৌঃ আমি বুঝতে পেরেছি। আপনার গ্রামে যেতে মন চাইছে।

মনাঃ তুমি ঠিক বলেছ। তুমি আমার মনটা পড়তে পার, সে জন্যই তোমাকে এত ভালবাসি।

মৌঃ কদিন পরেই তো গরমের ছুটি পাবেন। চলুন সবাই মিলে গ্রামে পিকনিক করে আসি। আমি অনেক শুনেছি, এবার দেখা হবে।

মনাঃ খুব ভাল বলেছ। প্রস্তুতি শুরুকরে দাও।আমরা আগামী পরশু রওয়ানা করব।

পরের দিন মনা তার বাবাকে ফোন করে তার পিকনিকের কথা জানালো। শুনে সবাই খুব খুশি হল।তাই তারাও সব কাজ বন্ধ করে পিকনিকের জন্য তৈরি হয়ে গেল।

দিনটা ছিল উনিশশত নব্বই সালের নয়ই মেএকটি কার ও একটি জীপ গাড়ী ধুলিময় গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে ধুলা উড়িয়ে সকাল দশটার কাছাকাছি সময়ে বৈদ্যপুর গ্রামে প্রবেশ করলো। গাড়ি দুটি এসে খলিল মোড়লে বাড়ির সামনে থামলো। এখানেই মনাদের বাড়ি ছিল। এর মধ্যে খলিল মোড়লের বাড়িটাও কে বে কারা পুড়িয়ে দিয়েছে। খলিল মোড়ল ও মারা গেছেন। ফলে তার বাড়িটা এখুন একটি ছোট্ট খাপরা টিনে বাড়িতে পরিনত হয়েছে। যেখানে তার ছোট তরফের ছেলেরা থাকে।

মনা গ্রামের সকল যুবক ছেলেদের ডাকলেন। এমনিতেই অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছিল গাড়ি দেখে। এসময় মানুষের কাজ থাকে না। ফলে প্রায় সমস্ত গ্রামের মানুষ চলে এসেছে। খাসি জবেহ করা হল। বাবুর্চি রান্না বান্না করতে লাগল।

মনার ভাই বিশু আর নুরজাহান এখুন দেখতে অনেকটা শহুরে ভদ্রোলোকের মত। তারা শহরে থাকে। ভাষাটাও পরিবর্তন হয়েছে। তারা গ্রামের আনাচে কানাচে তাদের টিমের সকলকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল। গ্রামের  শিশুরা দল বেঁধে তাদের পিছু পিছু ঘুরছে। আজ যেন তারা তাদের খেলাধুলার কথা ভুলেই গেছে।

কিন্তু মনা ঘুরতে গেল না। সে তার বয়সি যুবকদের ডেকে বললেন।

প্রিয় আমার গ্রামের যুবক ভায়েরা, আজ আপনাদের দাওয়াত, আমার সাথে  পিকনিকে অংশগ্রহন করবেন। আর এখুন আমি আপনাদের সাথে একটি খেলা খেলতে চাই। আপনারা আমাকে সাহায্য করলে আমি অনেক খুশি হতাম।

তারা সবাই হাত তুলে বললঃ আমরা আপনার সাথে খেলতে রাজি, কিন্তু খেলাডা কি ?

মনাঃ ডাঙ্গুলী।

ছেলেরা তাড়াতাড়ি একটি ডাঙ্গুলী বানিয়ে আনলো।

দুই দলে ভাগ হয়ে শুরু হল খেলা----।

মনা প্রথমে সেই অন্ধ ছেলেটাকে ডাঙ্গুলী চালাতে আমন্ত্রন জানালো। সবাই হাত তালি দিয়ে খেলা শুরু হল।

অনেকক্ষন ধরে চলল খেলা। কিন্তু আজ কোন খাটুনি নাই। যেহেতু প্রীতি ম্যাচ।মনা ভাল খেলতে পারছে না, কিন্তু বাল্য জীবনের ঘুমিয়ে থাকা  শুপ্ত বাসনা পুরণ করতে পারছে। মনার পরিবারের সবাই এসে তাদের খেলা  দেখছে। সমস্ত গ্রামের মানুষ হাততালি দিচ্ছে। বহু দিন পরে চৈত্রের খরাতেও গ্রাম যেন আজ ভরা যৌবনা ষোড়সি তরুনীর মত প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে সন্ধ্যার পূর্বক্ষণে মনাদের গাড়ি সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিল, বৈদ্যপুর গ্রামে মনার বাড়ি ভিটার চিহ্ন না থাকলেও, তাঁর বানানো সেই কাল্ভাটটি আজও    বীর দর্পে মাথা উচু করে গ্রামের মানুষের সেবা করে যাচ্ছেপ্রতিদিন সন্ধ্যায় সেই কাল্ভাটে বসেই লিখলাম ডাঙ্গুলীর ইতিহাস

                (সমাপ্ত)    

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।