উপন্যাসঃ - “ডাঙ্গুলী”--খোশবুর আলী (পর্বঃ – “এগার”)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
উপন্যাসঃ - “ডাঙ্গুলী”
--খোশবুর আলী
(পর্বঃ – “এগার”)
তারিখঃ – ০৭/০৫/২০২০
“এগার”
সোহেল চৌধুরী প্রায় প্রতিদিনই খোকন মিঞাকে টেলিফোন করে মনার খোঁজ খবর নিতে লাগলেন। খোকন মঞাও মাঝে মধ্যে মনার মেসে গিয়ে মনাকে দেখে আসেন। মনার কলেজে ক্লাসও পুরা দমে চলতে লাগল। কয়েক দিনের মধ্যে মনার বিভাগের সকল ছাত্র ছাত্রী জেনে গেছে যে মনা খুব মেধাবি ছাত্র। তাই খুব সহজেই অনেক ছাত্র তাঁর বন্ধু হয়ে গেল। মনা সবার সাথে ভাল ব্যাবহার করে। মনার বাবা যথেষ্ট টাকা পয়সা পাঠায় খোকন মিঞার মারফত। তাই বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া দাওয়া ও চলে হরদম।
এর মধ্যে মনার বন্ধুরা মেয়েদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে অনেকে। কিন্তু মনা খুব সাধারন সাধাসিধে ছেলে, মেয়েদের প্রতি তাঁর তেমন কোন আগ্রহ নাই।
কিন্তু কলা বিভাগের একটি মেয়ের সাথে বাংলা ও ইংরেজী ক্লাসে দেখা হয়। স্যার যখন প্রশ্ন করে সবার আগে মনা উঠে তাঁর উত্তর দিয়ে দেয়, দেখে সে মনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। মনার তেমন আগ্রহ নাই তাঁর প্রতি। তোবুও কেমন যেন অসস্তি লাগে মনার।
একদিন ক্লাসে যেতে মনার একটু দেরি হল, তাই সামনের ব্রেঞ্চে শিট না পেয়ে মনা পেছনে বসল। ফলে ক্লাস শেষে সবার পরে বের হচ্ছে মনা। মনার পেছনে আছে মেয়েদের দল। পাশে স্যার দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেদের আগে বের করে দেন, আর পরে মেয়েদের। মনা লক্ষ করল কেউ যেন পেছন থেকে তাঁর শার্টের কলারের ভেতর কিছু একটা গুঁজে দিল। কিন্তু তখন মনা পাশে দাঁড়ানো স্যারকে সালাম দিতে ব্যাস্ত, তাই পেছন ফিরে দেখা হল না। কিন্তু দরজার বাইরে গিয়ে বাম হাতে বইটা ধরে ডান হাতটা কলারের মধ্যে দিল। তাঁর হাতের সাথে বেরিয়ে এল একটি লাল গোলাপ।
পেছন ফিরে চাইতেই সেই মেয়েটিকে হাসতে দেখল। মনা আশ্চর্য হয়ে গেল মেয়েটির সাহস দেখে। স্যারের সামনে এ কাজ করলো অথচ স্যার কিছুই দেখতে পেল না। মনা আস্তে করে মেয়েটিকে বলল-
মনাঃ এটা আপনি দিয়েছেন?
মেয়েটিঃ হাসি মুখে আলতো করে মাথা ঝাকালো।
মনাঃ কেন?
মেয়েটিঃ এমনি।
মনাঃ আরও তো অনেক ছেলে ছিল, তাদেরকে দিলেও তো পারতেন।
মেয়েটিঃ ওরা তো সবার পিছে ছিল না?
মনাঃ তাঁর মানে আমি পেছনে ছিলাম বলে আমাকে দিয়েছেন?
মেয়েটিঃ হাঁ।
মনাঃ তাহলে আমি যদি প্রতিদিন পেছনে থাকি?
মেয়েটিঃ তাহলে আমিও প্রতিদিন একটি করে গোলাপ গুঁজে দেব আপনার শার্টের কলারে।
মনাঃ আর যদি অন্য কোন ছেলে পেছনে থাকে?
মেয়েটিঃ গোলাপটি আমার বই এর পাতার ভাঁজেই থাকবে।
মনাঃ তাঁর মানে কি দাঁড়ালো?
মেয়েটিঃ ওটা আপনার জন্যই বরাদ্দ।
মনাঃ কেন? আমার জন্যই কেন?
মেয়েটিঃ আপনি ক্লাসে স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তাই।
মনাঃ আর না পারলে?
মেয়েটিঃ গোলাপও বরাদ্দ থাকবে না।
মনাঃ ও তাই।
মেয়েটিঃ হুম।
মনাঃ আচ্ছা আপনার নামটি তো জানা হল না।
তাঁরা এর মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে প্রায় গেটের নিকট চলে এসেছে। মনার বন্ধুরা মনাকে মেয়েটির সাথে কথা বলতে দেখে দূর থেকে মজা নিচ্ছিল। যে ছেলেটি মেয়েদের ছায়া মাড়ায় না, সে কিনা রুম থেকে বের হবার পর থেকে এখনও কথা বলেই যাচ্ছে। তাই তাঁরা জোরে হাঁক মারলো-
এই মনা—এই দিকে আয় না ভাই, আমরা কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
মনা বন্ধুদের দিকে ফিরে তাকাতেই মেয়েটি তাঁর বান্ধবিদের মাঝে মিশে রাস্তায় চলে গেল। ফলে মনা গোলাপটিকে বই এর পাতার ফাঁকে লুকিয়ে নিল যাতে বন্ধুরা দেখতে না পায়। এবং বন্ধুদের নিকট ফিরে গেল।
পরেরদিন থেকে মনা ক্লাসে খুব তাড়াতাড়ি আসে। ফলে সামনের ব্রেঞ্চে বসে সে। মাঝে মাঝে আড়চোখে চেয়ে দেখে মেয়েটির দিকে। মেয়েটিও চেয়ে থাকে মনার দিকে। মনার খুব লজ্জা পায়।
ক্লাশ শেষে মনা আগেই বেরিয়ে যায় ফলে গোলাপ আর পায়না।
এভাবে কয়েকদিন গত হলে মনা ইংলিশ স্যারের নিকট প্রায়ভেট পড়তে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে সেই মেয়েটি আরও কয়েকজন ছাত্রীর সাথে প্রায়ভেট পড়তে এসেছে।
প্রায়ভেট শেষে স্যার মেয়েদের কে আগে বের করে দেন। মেয়েটি মনাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় মনার খাতাটি খুব দ্রুত টেনে নিয়েছে, কেউ লক্ষই করতে পারে নি।
ছেলেরা বেরোবার সময় মনা লক্ষ করল তাঁর খাতাটি নাই। তাই বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলো – তোমরা কে আমার খাতা নিয়েছো?
সবাই বলল না। নেইনি তোমার খাতা।
বাইরে বেরিয়ে এলে দেখতে পেল মেয়েদের মধ্যে সেই মেয়েটি সবার পেছনে হাঁটছে আর মাঝে মাঝে পেছন ফিরে দেখছে।
মনা তাকাতেই মেয়েটি খাতাটি উঁচিয়ে মনাকে দেখালো। মনা হেঁসে একটু দ্রুত পাঁ চালিয়ে এগিয়ে গেলে। মেয়েটি কিছু না বলে খাতাটি মনার হাতে দিয়েই মেয়েদের দিকে চলে গেল।
মনা খাতা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো খাতাটি কেমন মোটা মোটা লাগছে। কিন্তু বন্ধুদের সামনে খোলা যাবে না। তাই খাতাটিকে গোল করে শক্ত করে ধরে রাখলো।
মেসে ফিরে মনা তাঁর রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে, দরজাটা আটকিয়ে খাতাটি খুলে দেখেই চোখ চড়কগাছ। খাতার মধ্যে পাঁচ পাঁচটি গোলাপ, কোনটা বেশী শুকনা আবার কোনটা কম। দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না প্রতিদিন মেয়েটি তাঁর জন্য গোলাপ নিয়ে আসতো, আর দিতে না পেরে বই এর মাঝে লুকিয়ে রেখে এভাবে শুকিয়ে যেত। আজ সুযোগ বুঝে সব কটি খাতার মধ্যে দিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু ওর নামটাই তো এখনও জানা হয়নি।
বন্ধুদের বললেও তো তাঁরা হাঁসা হাঁসি করবে।
মনা খাতাটি রেখে তাঁর রূটিন মাফিক কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেল।
রাতে ইংরেজীর কিছু প্রাক্টিস করতে বসল।
খাতাটি উল্টাতেই একটি ছোট্ট ভাজ করা কাগজ দেখতে পেল। এমন কাগজ সে কখনও রাখেনি। তাহলে এলো কোথায় থেকে। হঠাত মেয়েটির কথা মনে হল। সে রাখেনি তো?
খুলে দেখলো মনা- তাতে লেখা,
“নামটা জানা হল না তো? তাই বলছি । মৌমিতা। বাবা-মা আর বান্ধবিরা ডাকে মৌ বলে। গোলাপ গুলো কি দোষ করলো? প্রতিদিন নিলে তাজা সুবাস দিতো। দেরি করার জন্য শুকিয়ে গেল ? আমি কি বললাম বুদ্ধি থাকলে বুঝে নিবেন।”
মনা পড়ে বুঝে ফেলল, সময় পেরুবার আগেই মেয়েটি তাঁর ভালবাসা চাইছে।
কিন্তু মনার এসব করার এখুন কোন রকম ইচ্ছা নাই। সে তাঁর শিকড়কে খুঁজে চলছে। মৌ-এর সাথে কথা বলা দরকার। আমার জীবনের গল্প তাঁর জানা দরকার।
কিন্তু কোথায় তাঁর সাথে দেখা করা যায়। মনা ভাবতে লাগল।
এমন সময় মেসের মালিকের ছেলে এসে মনাকে জানালো যে তাঁর ফোন এসেছে। তাই মনা মালিকের ছেলের সাথে সাথে চলল ফোনে কথা বলার জন্য।
টেলিফোন ধরে মনা সালাম দিতেই অপর প্রান্ত থেকে খোকন মিঞা বলল, বাবা তুমি আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে এস। আমার মেয়ের আজ জন্ম দিন। ছোট খাট একটু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। তুমি অবশ্যই আসবে তো?
মনা সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখল।
বিকালে মনা স্টেশানে গিয়ে সেই দোকানদার চাচার নিকট থেকে বিবি খাদিজার (রাঃ) জীবনি বইটি গিফট দেবার জন্য কিনে নিয়ে এল।
---------------------------///
*****কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ*****
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন