1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ ছেঁড়া চিরকুট --------খোশবুর আলী পর্বঃ ০৮ (আট)

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ ছেঁড়া চিরকুট

--------খোশবুর আলী

পর্বঃ ০৮ (আট)

তারিখঃ ০৯/০৮/২০২০

 

    কিছুক্ষন পরে খালাও এসে রুহুলের পাশে বসলো। রুহুল খালাকে বললো-

খালা ছাব্বর ভাই কই?

খালাঃ গরু চর‍্যাতে গেঝে খাড়ি ধারত। এতো বেলা গেলো, এঘুনি চল্যা অ্যাসবে।

রুহুলঃ খালা আজ তুমারে বাড়ি এরকুম ল্যাগছে ক্যান?

খালাঃ ক্যামনরে ব্যাটা?

রুহুলঃ মুনে হচ্ছে চোর অ্যাসপে তুমারে বাড়িত আজ রাতেত।

খালাঃ ও বুঝতে প্যারছি, ম্যালাদিন পর অ্যালু তো, তাই এরকুম ল্যাগছে। তুর ছাব্বর ভাই আসুক, অর সাথে থ্যাকলে ভালো ল্যাগবে নি।

রুহুল উঠে দাঁড়ালো এবং বাড়ির বাহিরে গেল। খালাদের বাড়ির কোন বাহির দরজা নাই। ফলে চারদিক থেকেই চারটা গলি আছে বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য। তিন ভিটায় তিনটা মাটির ঘর আর পশ্চিম ভিটায় গরুর গয়াল ঘর। পুর্বদিকের ঘরে থাকে রুহুলের বড় মা-বাবা, (রুহুলের বাবার চাচাত ভাই)। তার পাশেই একটি ছোট্ট গোয়াল ঘর আছে। দক্ষিণে আকবোর ভাইয়ের ঘর, আর পশ্চিমে খালা আর ছাব্বর ভাই থাকে একটি ঘরে এবং পাশে আরেক ঘরে আজগোর ভাই। চারিভিটার ঘরগুলির মাঝে মাঝে একটি করে গলি আছে, সবদিথেকেই বাড়িতে প্রবেশ   করা যায়।

    রুহুলের মন তখনো শান্ত হলো না। তাই সে মাটির রাস্তা ধরে খাড়ির দিকে এগিয়ে গেল ছাব্বর ভাই গরু নিয়ে মাঠ থেকে আসছে কি না দেখার জন্য। কিছু দুরে সে একটি গরুর পাল মাঠ থেকে আসতে দেখল।  বানিয়াল গ্রামের আর অন্যান্য রাখালদের সাথে ছাব্বর ভাইকে আসতে দেখলো রুহুল।তাঁরা মাঠের খোলা খেলার কথা তর্ক বিতর্ক করতে করতে আসছিল। খোলা খেলা হলো পোড়ামাটির হাঁড়ি অথবা পাতিলের ভাঙ্গা অংশ যা থাকে দলের সবার কাছে। এক যায়গায় মটিতে ছোট্ট গর্ত করে সেই গর্তে এক পাঁ রেখে দূরে তার খোলা চালিয়ে দেবে, এভাবে যার খাওয়ার পালা সে ছাড়া সবায় খোলা ছুড়ে দেবে দূরে। এবার যে বা যার খাবার পালা সেইজন এক একজনের  খোলার নিকট  তাঁর খোলা চালাবে যদি পাশাপাশি পড়ে অথবা চার আঙ্গুল দুরত্তের মধ্যে পড়ে তাহলে সে দান জিতবে। অর্থাৎ যার খোলার নিকট পড়বে তার বাম হাতের মূঠোয় ধরে রাখা টাকা বা পয়সা তাকে দিয়ে দিতে হবে। যদি কারো খোলা খুব বেশি দূরে চলে যায় এবং খাওয়া ওয়ালা যদি মনে করে যে, সেখানে চালিয়ে সেই খোলার নিকট ফেলা যাবে না, তাহলে তাকে সেখান থেকে আবার সেই গর্তে ফেরত আসার চ্যালেঞ্জ করে। তখন তাকে আবার সেখান থেকে খোলা চালিয়ে পুর্বের গর্তে ফেলতে হয়, পারলে খাওয়া ওয়াল হাতে যত পয়সা থাকে সেটা পেয়ে যায় আর না পারলে ততো পরিমান পয়সা খাওয়া ওয়ালাকে দিতে হয়।

 

    তাদের তর্ক বিতর্ক দেখে রুহুল বুঝতে পেরেছে যে ছাব্বর ভাই আজ নিশ্চয় খেলায় জিতেছে। রুহুলকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছাব্বর ভাই বললো-

    কে----রে, তুই ক্যান ইটে দাঁড়ায়্যা আছিস? কঘুন অ্যালু। চ বাড়িত চ।  

রুহুলকে দেখে সকল রাখালেরা তর্ক থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো—

    কি-রে ছাব্বর? তুরে কুটুম কদ্দুর কারা?

ছাব্বর ভাই বললো—

           বৈতপুরের, আমার খালাতো ভাই।

গরু গুলি হুড়োহুড়ি গুতোগুতি করতে করতে আসছিল। গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করার পর নিজ নিজ বাড়ির অভিমুখে ভাগ হয়ে চলে গেল। ছাব্বর ভাইও তার সকল গরুগুলি গুছিয়ে বাড়িতে আসতে লাগলো, সাথে সাথে রুহুল আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলো, ভাই আজ কয় ট্যাকা জিতলেন।

    ছাব্বর ভাইঃ বিশ ট্যাকা।

    রুহুলঃ আশ্চর্য হয়ে, বিশ ট্যাকা!

    ছাব্বর ভাইঃ হ্যাঁ, হামার গাওত (গায়ে) যে গেঞ্জি দেখছিস, এড্যা খোলা  খেল্যা কিনা।

রুহুল শুনে খুব আশ্চর্য হয়। সে বলে, খঘুনো হ্যারেন নি?

    ছাব্বর ভাইঃ কতো হেরনু। কথা বলতে বলতে তারা বাড়িতে এসে পড়েছিল তাই রুহুলকে বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়াতে বলে ছাব্বর ভাই গরিগুলিকে গোয়াল ঘরে ভরে ঘরের মুখে লাগানো ঝাপ লাগয়ে দিচ্ছিল, এ সময় রুহুল পাশে এসে বললো ভাই, গোয়াল ঘরের ঝাঁপ ভালো কর‍্যা লাগাও। হামার মুনে হৈচ্ছে, অ্যাজ তুমারে বাড়িত চোর অ্যাসপে।

শুনে ছাব্বর ভাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। তুর জি কধা, হামরা এমনি কর‍্যাই থুই কুনদিন চোর আসার সাহুস পায়নি, আর অ্যাজ তুর কধা শুন্যা হাসি ল্যাগলো রে। চ, পঘরেত (পুকুরে) চ, হাত মুখ ধুয়্যা আসি।  

 

রুহুল ও ছাব্বর ভাই একসাথে পুকুরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিল। ইতি মধ্যে মাগরিবের আযান হয়েছে। তখন মসজিদে কোন মাইকের ব্যাবস্থা ছিল না। মোয়াজ্জিম মুখে আজান দিত। দু’এক জন মুসল্লি আসলেই কেরোসিনের বাতির আলোতে নামাজ পড়তো তারা।

খালা ঘরের বারান্দায় খেজুর পাতার পাটি পেড়ে তাতে বসে বসে হাতপাঁখা দোলাচ্ছিল। রুহুল ও ছাব্বর ভাই বাড়ি এলে খালা বললেন তুরা ইটে বস। হামি ভাত রেডি করি।

 

    কিছুক্ষনের মধ্যে খালা থালা বাসন ও ভাত তরকারী নিয়ে এলোকেরোসিন বাতির আলোতে খেতে বসলো তারা। আলু ভর্তা ডাল ভাত খাওয়া হলে দুধভাত খাবার পালা। দু’টো গাভির দুধ হয় প্রতিদিনিই। তখন দুধ বিক্রির প্রচলন তেমন ছিল না। প্রতিবেশীদের প্রয়োজনে দুধ বিনা পয়সায় পাওয়া যেত।

   

    রুহুলের থালায় ভাত দিয়ে তাতে দুধ ঢেলে দিলেন খালা।

রুহুল দুধভাত নাড়তে নাড়তে খালার মুখের দিকে তাকিয়ে লবণ দিতে বলল।

কিন্তু খালা কোন লবণ দিলেন না। আর লবণ ছাড়া রুহুল দুধভাত খেতে পারে না। খালা আর ছাব্বর ভাই কিন্তু দিব্বি লবণ ছাড়াই গপাগপ খেয়ে ফেলছে। দেখে রুহুল আশর্য হয়ে গেল।

 

    সে সময় গ্রামে একটি কু-সংস্কার বিরাজ করছিল। দুধভাত খাবার সময় তাতে লবণ মেশালে নাকি গাভীর ওলান ফেটে যায়, এতে গাভীর কষ্টো হয়। তাই তারা দুধভাতে লবণ মিশিয়ে খেতো না। এতে তাদের অসুবিধাও হয় না। এটিকে তাঁরা  অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছেন। কিন্তু রুহুল কিছুতেই খেতে পারছে না, খালা লবণও  দিচ্ছে না। অগত্যা কি আর করা কয়েকবার মুখে দিয়ে কোন রকমে গিলে ফেললো রুহুল। তারপর দুধটুকু চুমুক দিয়ে খেয়ে হাত ধুয়ে নিল। দেখে খালা আর ছাব্বর ভাই বেশ হাসাহাসি করলো। পাশের ঘর থেকে বড় ভাই আর ভাবি এসেও সেই হাসাহাসিতে যোগ দিল। তারা বলল—আহা! বেচারিক ভাত খ্যাতে দিয়্যা অপমান করলু তুরা।

রুহুল মুখটা কাঁচুমাচু করে বারান্দায় দড়ির খাটে গিয়ে বসলো। বড় ভাবি পাশে বসে মস্করা করতে লাগলো। রুহুল বললো—হাঁমাক ঠগালেন, অ্যাজ রাতেই আল্লা তুমারে বিচ্যার করবে। তুমারে বাড়িত চোর অ্যাসপে। রুহুলের কথা শুনে তাঁরা আরো জোরে হো হো করে হেঁসে উঠলো।

 

    অনেক কথাবার্তা আর হাসি তামাসা চলছিলো, এর মধ্যেই এশার আজান হলো।  গ্রামে এশা মানেই অনেক রাত। কিছু নেশাখোর মানুষ ছাড়া সবাই হারিকেন বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যারা জেগে থাকতো তারা তাস (কার্ড) খেলায় ব্যাস্ত  থাকতো। রুহুলের খালার বাড়ি থেকে প্রায় পঞ্চাশ গজ পশ্চিমে ইলামদহি যাবার রাস্তা। সেই রাস্তার পাশেই কয়েকজন হারিকেন জ্বেলে খেজুর পাতার পাটি পেড়ে বসে তাস খেলছিল। গরমের দিন। গ্রামের মাটির ঘরে খুব বেশি গরম লাগে না।  রুহুল,খালা আর ছাব্বর ভাই ঘরে খেজুর পাতার পাটিতে শুয়ে পড়লো। রুহুল ঘুমালো খালার পাশে। খালা তালপাতার পাখা দুলিয়ে বাতাস  করছিল আর গল্প  বলছিল তাদের ছোটবেলারআমার  মায়ের সাথে ঘুমাতো, খেলতো, বিলের মধ্যে মাছ মারতো ঘুরতো কতো গল্প আমার নানার বাড়ি ছিল চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার গনকা বিদিরপুর গ্রামে, গ্রামটি চাঁপাই জেলা শহর থেকে পূর্বদিকে প্রায় মাইল খানেক  দূরে চাঁপাই-আমনুরা রেল লাইনের পাশে। সেই রেল লাইনের পাশে ছাগল চরাতো রুহুলের মা-খালারা,লাইনের পাশের নয়নজুলিতে মাছ ধরতো। রুহুল হাঁয় তুলতে তুলতে খালার গল্প শুনছিল আর পাখার বাতাসের ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো।  

-----------------------------------

আসছে আগামী পর্ব ০৯, সাথে থাকেব আশাকরি।

   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।