1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ ছেঁড়া চিরকুট -------খোশবুর আলী (পর্বঃ ০৭)

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ ছেঁড়া চিরকুট

-------খোশবুর আলী

         পর্বঃ ০৭

    তারিখঃ..................

ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রী সেদিন বিএসসি স্যারের হাতে বেশ কয়েকটি করে উত্তম মধ্যম খেয়েছে একমাত্র রুহুল ছাড়া। তাই সকল ছেলেমেয়ে সেদিন থেকে রুহুলের উপর বেশ হিংসা করতে লাগল। ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার সময় সবাই কেমন আলাদা হয়ে জোরে জোরে হেঁটে আগেই চলে যাচ্ছে। কেহই রুহুলকে সাথে নিচ্ছে না। হুরুল একবার হাঁক ছেড়ে বলল—

কিরে জনি তুরা সব থাম না , এক সাথে যাব।

কিন্তু কোন জবাব না দিয়েই আরো দ্রুত বেগে তাঁরা পাঁ চালালো। 

এবার রুহুল বুঝতে পারলো, আজ সে ছাড়া সবাই স্যারের হাতে মার খাওয়ার জন্য তাঁর উপর সেই ঝাল ঝাড়বার চেষ্টা করছে। রুহুল মনে মনে বেশ হুতাশ হলো। আবার খুশিও হলো এই ভেবে যে, যাক, আমি যা চায়ছিলাম তা কতো সহজেই পেয়ে গেলাম। সবাই কেমন আমার পিছু নিয়েছিল, গোয়েন্দার মতো আমাকে পাহারা দিচ্ছিল। ভালোই হলো। এখন আমি আরো ভালভাবে আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারব।

রুহুল হাঁটার গতি কমিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলতে লাগলো। ইতিমধ্যে তাঁর সহপাঠিরা কোয়েল পশ্চিম পাড়ার দিঘি পেরিয়ে দক্ষিন দিকে মোড় ঘুরেছে, কিন্তু রুহুল তখনো গোরোস্থানের আম তলায় পড়ে আছে। ফলে সে আর তাঁর সহপাটিদের দেখতে পাচ্ছে না। রুহুল কতো কি ভাবতে লাগল। গত কয়েক দিনে তার আমুল পরিবর্তন সে নিজেই বুঝতে পারছে। স্বপ্নের চামেলীকে সে জীবনে কখনো পাক বা না পাক, সেই চামেলীর চিরকুট তাকে জীবন বোধের বেশ একটি ভাল শিক্ষা দিয়েছে।

এভাবে রুহুলের কয়েক মাস কেটে গেল। ক্লাসে এখন তাঁর বেশ সুনাম। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া, বাড়ির কাজ করা, মাঠে বাবার কাজে সাহায্য করা সবই খুব ভাল ভাবে চলছিল। তার এমন পরিবর্তন তাঁর বাবা-মা ও লক্ষ করেছে, কিন্তু মনের অলিন্দে বেড়ে উঠা প্রেমের খবর কেউ জানেনা। প্রেম মানুষের জীবনকে এত রঙ্গিন ও স্বপ্নময় করতে পারে , মানুষের জীবন ধারা পালটে দিতে পারে এটা অনেকেই মানতে পারেন না, তাই না বুঝেই সমালোচনা করে থাকেন।

যা হোক, গত মাস কয়েকের ভেতর রুহুল আর কোন চিরকুট পায়নি, এমনকি চামেলীকে নিয়ে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নও দেখে নি। কিন্তু যখন কোথাও একা থাকতো তখন ভাবনার মধ্যেই সে চামেলীর সাথে কথা বলত। সেই প্রথম দেখা স্বপ্নটাই যেন ঘুরেফিরে দেখতো। সেই হাসি, সেই কথা, সেই রুপ তাঁর বয়োসন্ধি কালের মনের অলিন্দে যে রেখাপাত করেছে তা আজও অতি যত্নে সে তাঁর কল্পলোকে  ধারণ করে আছে।

রুহুল প্রতিদিন রাত্রে কমপক্ষে পাঁচ সাতবার চিরকুট দু’টো পড়ে। এটি তাঁর নিত্যদিনের কাজ। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে কয়েকদিনধরে  বাড়িতে থাকার কারনে রুহুলের তেমন ভাল লাগছিল না। একদিন বিকালে বাড়ির খোলিয়ানে রুহুল ছেড়ে রাখা গরুর গাড়িতে বসে ছিল, আর তাঁর বাবা বাঁশের বেঁতি তুলছিল। প্রতি বছর এসময় গ্রামের মানুষ তাদের খড়ের চালা নতুন করে ছাউনি দিত। কারন গ্রীষ্মের পরই বর্ষা আসে। সুতলি দড়ি কেনার পয়সা অনেকের থাকেনা, তাই বাঁশের বেঁতি দিয়ে চালা বাধেঁ। এটি যেনম সহজ তেমন টেকসইও বটে। রুহুলের বাবা খুব ভাল বেঁতি তোলার কারিগর। প্রতি বছর এসময় গ্রামের অনেকেই বেঁতি তুলে নেবার অন্য কাঁচা বাঁশ নিয়ে আসে। নিজের বাড়ির জন্য যতটুকু বেঁতি লাগবে সেটি গোছাকরে বেঁধে পানিতে ভিজিয়ে রেখে, তারপর মানুষের কাজে হাত দেন।

পাশের বাড়ির আতু রুহুলের কয়েক বছরের বড়। সে একটি শার্ট পরে সেজে গুজে কোথায় যেন যাচ্ছিল। রুহুলদের বাড়ির পাশ দিয়েই রাস্তা। তাই বাড়ির বাহিরে থাকলেই গ্রামের সকল মানুষকে দেখা যায়, কে কোথায় যাওয়া আসা করছে।

আতু রুহুলের সম্পর্কে চাচা হয়। তাই রুহুল আতুকে দেখে বলল—

কি বারে? স্যাজ্যা গুজ্যা কুনঢে য্যাচ্ছেন?

আতু রাস্তা দিয়ে হাঁটা বন্ধ করে রুহুলের দিকে আসতে আসতে বলল-- ব্যানাল য্যাচ্ছি দাদিরে বাড়িত ব্যাড়াতে। যাবু নাকি তুই, তুর খালার বাড়িত। চ তুর তো স্কুল ছুটি আছে।

রুহুলেরও কয়দিন থেকে বাড়িতে বসে থেকে ভাল লাগছিলো না। তাই তাঁর বাবাকে বলল-

আব্বা, হামি ব্যানাল যাব, আতু কাকার সাথে?

বাবা এক মুহুর্ত কি যেন ভাবলেন, তারপর বললেন—

ঠিক আছে যা, তবে ক্যাল চল্যা আসিস।

রুহুল খুশি হয়ে বাড়িতে ছুটে গেল মাকে বলতে। এখুন মা মতামত না দিলেও অসুবিধা নাই। কারণ বাবা ইতিমধ্যে মত দিয়েছে। সে তাঁর ভাল শার্টটি পরে নিল। শার্ট পরতে দেখে মা জিজ্ঞেস করলেন---

এ সুময় কুনঢে যাবু? শার্ট পরছিস ক্যান?

রুহুলঃ মা, ব্যান্যাল যাব, খালার বাড়িত ব্যাড়াতে।

মাঃ তুই একলাই যাতে প্যারবু কি?

রুহুলঃ আতু কাকার সাথে যাব।

মাঃ তুর আব্বাক ব্যুল্লু কি?

রুহুলঃ হুঁ, আব্বা য্যাতে ব্যুল্ল।

মা সরিষার তেলের বোতলটা এনে হাতের তালুতে কিছু তেল নিয়ে রুহুলের মাথায় দিয়ে দিলেন, সেই সাথে চোখে মুখেও মাখিয়ে দিলেন। এরপর চিরুনিটা এনে মাথা আঁচড়িয়ে দিলেন।রুহুল মায়ের অলক্ষ্যে তাঁর প্রিয় চিরকুট দুটি পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছে।

রুহুল হাসিমুখে বাড়িথেকে বেরিয়ে এলো, খোলিয়ানে আতু দাঁড়িয়ে ছিল, রুহুলকে আসতে দেখে বলল—

চ বারে তাড়াতাড়ি চ। ব্যালা চল্যা গেল। য্যাতে য্যাতে সাঁঝ ল্যাগ্যা যাবে।

রুহুল আর আতু গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটতে লাগলো। আতু পড়ালেখা করে না। সে রুহুলের লেখাপড়ার খোঁজ খবর নিচ্ছিল। রুহুলও তাঁর প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে সাথে সাথে হাঁটছিল। সুন্দর বিকেলের টকটকে সূর্য্যটা একখন্ড মেঘের আড়ালে চলে যাওয়ায় একটি শিতল বাতাস তাদের শরীর জুড়িয়ে দিল। রাস্তায় লাগানো শিশুগাছ গুলি বিগত কয়েক মাসে বেশ বেড়ে উঠেছে। ঠান্ডা হাওয়ার পরশে তাঁরা হেলেদুলে নাচ্ছিল।এ রাস্তা দিয়ে রুহুল প্রতিদিনিই দুইবার যাতায়াত করে। এটিই তাঁর স্কুলে যাবার পথ।কোয়েল স্কুল পর্যন্ত পথ তাঁর ভালভাবে চেনা। কোয়েল পূর্ব পাড়া পার হলে খাল। যাকে স্থানীয় ভাষায় খাড়ি বলা হয়। কোয়েল পূর্ব পাড়া পার হলেই আকাশে মেঘ ছেয়ে গেল। এসময় আকাশে মেঘ মানেই ঝড় বৃষ্টি। সামনে খাড়ি পার হতে হবে। খাড়িতে কোন ব্রিজ বা মানুষ পারাপারের বাঁশের সাঁকোও নেই। এসময় খাড়িতে বেশি পানি থাকে না।কিন্তু বৃষ্টি হলে মুহুর্তেই খাড়ি ভরে যায়। বেশ স্রোত চলে তখন।পানিগুলি পাক খেয়ে খেয়ে ঘুর্ণি বায়ের মতো চলতে থাকে। বেশ ভয়ংকর দেখায়।এমন সময় কোন গরু-বাছুর অথবা মানুষ পড়লে নির্ঘাত মৃত্য।

তাঁরা দ্রুত পাঁ চালালো খাড়ির দিকে। আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়তে চাইছে। ইতিমধ্যে মেঘ ডাকা শুরু করেছে। বাতাস বইছে সাঁই সাঁই বেগে। জন শুন্য খাড়ির ধারে এসে তাঁরা থমকে দাঁড়ালো। খাড়িতে পানি আছে, কিন্তু কতটা পানি না নামলে বলা যাবে না। আবার এখন ভাবারও সময় নেই। তাই দু’জনে লুঙ্গি লেংটি সেটে  নেমে পড়লো। আতু গায়ে হাতে বেশ লম্বা, সেই আগে নামলো আর রুহুল তাঁকে অনুসরন করছে। খাড়ির মাঝখান্টা বেশি গভির ছিল তাঁরা বুঝতে পারে নি। আতু কোন রকমে তাঁর কাপড় বাঁচিয়ে পার হল বটে কিন্তু রুহুলের শেষ রক্ষা হল না।গর্তের মধ্যে তাঁর পাঁ পড়তেই লুঙ্গি গেল ভিজে।শার্টটি কোন রকমে উঁচু করে ধরায়, শার্ট আর ভিজলো না। কোন রকমে খাড়ির অপর পাড়ে উঠে এলো তাঁরা। আতুর নিকট গামছা ছিল। আতু জানতো খাড়ি পার হতে গামছা লাগতে পারে, তাই সাথে এনেছে।

সে গামছা রুহুলকে দিল। রুহুল গামছা পরে লুঙ্গি খুলে পানিটা চিপে নিল। এখন গামছা পরে তো আর যাওয়া যাবে না। কিন্তু আকাশে মেঘ, দাঁড়ানোও যাবেনা। রুহুল আবার তাঁর লুঙ্গিটা পরে নিল । ভেজা লুঙ্গি পরে জোরে হাঁটা যায় না। তাই লুঙ্গিটা কিছুটা উঁচু করে নিল। খাড়ির কাছাকাছি সাঁওতাল পাড়া। তাঁরা রাস্তা ধরে সেইদিকে হাঁটতে লাগল। সাঁওতাল পাড়া পৌঁছার আগেই বৃষ্টি শুরু হল।তারা দৌড়িয়ে বিশু মার্ডির বাড়িতে ঢুকে পড়লো বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।

বিশু মার্ডি বাড়িতে ছিল না। তাঁর স্ত্রী নীলমণি হেমরম বাঁশের তৈরি ম্যাছা, এনে বসতে দিল। বলল—

তুরে বাড়ি কুনঢে গো? কুনঢে যাবি তোমরা?

রুহুল এমন কথা শুনে মনে মনে হাসছিল, কিন্তু মুখে হাসতে পারলো না।

আতু বলল—

হামারে বাড়ি বৈতপুর , যাব ব্যানাল ঐ পাড়া।

নীলমনিঃ কারে বাড়িত যাবু তোমরা?

আতুঃ রফিকেরে বাড়িত।

নীলমনিঃ রফিক কে হয় তোমাদের?

আতুঃ চাচা।

নীলমনিঃ ও আচ্ছা। তোমরা বস, পানি থামলে যাস।

কিছুক্ষনের মধ্যে ঝড়বৃষ্টি থেমে গেল। আসোলে যতোটা ডেকে হেঁকে এলো ততোটা বৃষ্টি হলনা। তবে পথ ঘাট সামান্য কাদা করে দিয়ে গেল।

বৃষ্টি থামলে তাঁরা আবার হাঁটা শুরু করলো। প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর তাঁরা বানিয়াল পুর্ব পাড়ায় গিয়ে পৌছালো। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আতু তাঁর দাদার বাড়ি আর রুহুল তাঁর খালার বাড়িতে গিয়ে উঠল। খালা রুহুলকে দেখে মহা খুশি হলেন। রুহুলের গা-হাত নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞাসা করলেন—

তোর মা কেমন আছে বেট্যা?

রুহুলঃ ভাল আছে খালা।

খালাঃ পানির সুময় কুন্ঠে ছিলু ব্যাটা?

রুহুলঃ এক শাঁতালের বাড়িত।

খালা রুহুলের লুঙ্গি ভেজা দেখে একটি শুকনা লুঙ্গি এলে দিলেন। রুহুল লুঙ্গি পরিবর্তন করে বারান্দায় রাখা দড়ির খাটে গিয়ে বসলো।

-------------------------------------

--- চলবে—আগামী পর্বঃ ০৮। সাথে থাকবেন আশাকরি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।