পাঁচশ টাকার বিয়ে
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
পাঁচশ টাকার বিয়ে
-------------------------------------
____খোশবুর আলী
যেহেতু
গ্রামে বসবাস করি, তাই নিজের গ্রাম ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই
আমার পরিচিত। আমার পাশের গ্রাম শিকপুর। সেই গ্রামের প্রায় আশি ভাগ মানুষই আমার
চেনা। অনেক মুরুব্বি মানুষ যারা আমাকে
শিক্ষক হিসাবে সম্মান করেন আর আমিও তাদেরকে সম্মান করি দেখা হলেই সালাম বিনিময়
করি, বাড়ির খোঁজ খবর নি। আজ সকালে আমার দোকানে এসে সবেমাত্র বসেছি এমন সময় আমার
দোকানের সামনে দিয়ে শিকপুরের এক মুরুব্বি হেঁটে যাচ্ছিলেন।আমি উনার নামটি প্রকাশ
করতে চাই না। আমি একটু জোরেশোরে মুরুব্বির উদ্দেশ্যে সালাম দিলাম। সালামের জবাব
দিয়ে উনি আমার নিকট এগিয়ে আসলেন মোসাফা করার জন্য। আমিও দাঁড়িয়ে হাত মিলালাম।
জানতে চাইলাম এতো সকালে এদিকে কি মনে করে বাবজি?
তিনি
কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি বসতে বললাম। তিনি বসলে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে
বুঝলাম তিনি বেশ বিপদে আছেন। মুখটা কাচুমাচু করে বললেন__
বাবজি- আমি
একটু গেছিলাম মজিবুর মেম্বারের নিকট। ( আসলে মজিবুর মেম্বার না, উনার স্ত্রী মহিলা
মেম্বার। সেই সুবাদেই সবাই তাকে মজিবুর মেম্বার বলে থাকেন)
আমি- কি কাজ
এতো সকালে?
বাবজি- কি
বলবো বাপু, বলতে লজ্জা কিন্তু না বলে পারলাম না, আমার একটি মেয়ে আছে তার বিয়ে
সাদির ব্যাপারে একটু সাহায্য চাইতে গেছিলাম।আমারও কিছু নাই, আর কোনোদিন কোনো
মানুষের নিকট হাত পাতিনি কিত্নু শেষ পর্যন্ত আর পারলাম না। বর পক্ষের কোন দাবিশোবা
নাই কিন্তু যে পাঁচটা মানুষ আসবে তাদেরকে তো আপ্যায়ন না করে পারা যায় না?
আমি- তা তো
বটেই, তা যে কাজে গেছিলেন কিছু হলো?
বাবজি- হ্যাঁ
দেখা হলো। তিনশো টাকা দিল আর পরে নাকি আর দুইশো দিবে তাই বলল, আজ আর টাকা নাই তাই
বলল । দেখি কারো কাছে হাওলাত বারাত করে না হয় বিয়েটা পার করে, পরে আবার একদিন
আসবো।
বাবাজির
মুখটা শুকনা দেখে খুব মায়া হলো। তিনি ওঠে চলে যাচ্ছিলেন, আমি একটু দাঁড়াতে বললাম।
আমার দোকানের ড্রয়ার, ব্যাগ, আর মানি ব্যাগ হাঁতড়িয়ে এক জায়গায় করলাম সব মিলে
দুইশত কুড়ি টাকা হলো। কুড়ি টাকা ড্রয়ারে রেখে দুইশত টাকা উনার হাতে দিলে বৃদ্ধের
দু’চোখ বেয়ে দুই ফোটা জল বেরিয়ে এলো। (সম্মানিত পাঠকঃ দুইশত টাকা দান করে এই
গল্পের মাধ্যমে তা প্রচার করা আমার উদ্দেশ্য নয়, দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি
আসলে একটি অসহায় বাবার অবস্থা তুলে ধরতে চেয়েছি )
তিনি বললেন-
বড় আশাকরে বেরিয়েছিলাম বাবা। মনে মনে ভাবছিলাম অন্তত পাঁচশটি টাকা হলে আমার
কোনোমতে চলে যেত, কিন্তু সেখানে গিয়ে পেলাম তিনশ টাকা, তাই মনে কষ্ট নিয়েই
যাচ্ছিলাম।
আমি বললাম,
চাচা এতে হবে তো?
তিনি
বললেন- আলহামদুলিল্লাহ্। হবে। আসলে তিনি তো মানুষ , নিজ চোখে দেখলেন আমার অবস্থা।
আমি চেষ্টার কোন কমতি করিনি। তাই হয়তো আর চাইলেন না। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না
বিজড়িয়ত কন্ঠে আমার জন্য অনেক দোয়া করলেন। তিনি চলে গেলে আমার মনে হলো মানুষ কতো
অসহায় হলে তবেই অন্যের নিকট হাত পাতেন। মেয়ের বিয়েতে কেউ কোটি টাকা যৌতুক দেন,
আবার কোটি টাকা খরচ করে বিয়ের অনুষ্ঠান করে আবার কোন পিতার সংসারে একটা বিবাহ
যোগ্যা কন্যা তার জীবনে অভিসাপ হয়ে উঠে।নিজের লজ্জা শরম বিকিয়ে অন্যের নিকট হাত
পাততে বাধ্য হয়।আর মাত্র পাঁচশত টাকায় তার মেয়ের বিবাহের অনুষ্ঠান হয়ে যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে এটিই হলো আসল বিয়ের অনুষ্ঠান। আর লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা খরচ
করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার নামই অপচয়।
-----------------------------------
বৈদ্যপুর,
তানোর, রাজশাহী- ২৮/১২/২০২০
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন