ধারাবাহিক উপন্যাসঃ “ছেঁড়া চিরকুট” পর্বঃ (চার)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ধারাবাহিক উপন্যাসঃ
“ছেঁড়া চিরকুট”
-----খোশবুর আলী
পর্বঃ (চার)
তারিখঃ১১/০৭/২০২০
কিছুক্ষুন পরে
দলে অন্যান্য বন্ধুরা পেছন থেকে এসে একত্রিত হলে সবাই এক সঙ্গে স্কুল অভিমুখে চলতে
লাগল। বিভিন্ন সহপাঠি বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে রুহুলের আজকের ঘটনা জানার চেষ্টা
করতে লাগল কিন্তু রুহুল খুব চালাকির সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর
দিয়ে কাটিয়ে উঠল। রুহুল খুল সাদাসিধে ছেলে, কখনও কোন ধরণের ফেরপ্যাঁচ
বোঝেনা। সবাই জানে রুহুল যেটা সত্যি সেটায় বলে। সুতরাং তাঁরা সকলে রুহুলের কথা
বিশ্বাস করে নিল। একটি মাত্র চিরকুট পেয়ে রুহুল কতটা চালাক হয়ে গেছে মনে মনে ভেবে
রুহুল বেশ খুশিই হল।
রুহুল বুঝতে
পেরেছে আজ আর এদেরকে ছেড়ে সামনে এগুনো যাবেনা, বরং স্কুলের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি
কৌশলে সবার পেছনে পড়ে যাব। সবাই ক্লাসরুমে ঢুকে গেলে আমি চারিদিকটা একবার দেখে
নিয়ে ক্লাসে ঢুকব।
ঠিক তাঁর ভাবনা
মত চলতে চলতে এক পা এক পা করে রুহুল সবার পেছনে পড়ে গেছে কেউ খেয়াল করে নি। সবাই
ক্লাসে ঢুকলে রুহুল কল পাড়ের দিকে পাঁ ধোয়ার ভান করে এগিয়ে গেল। কল পাড়টি ষষ্ঠ
শ্রেণীর রুম থেকে একটু দুরে।হাট খোলা ভেতর দিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য দুটো গলি ছিল,
একটি উত্তর প্রান্তের সাইন্স বিল্ডিং এর সামনে দিয়ে আর একটি স্কুলের মাটির দোতালা
ভবনের দক্ষিণ পাশ দিয়ে। পক্ষান্তরে ষষ্ঠ
শ্রেণীর ক্লাসটি একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে। কোয়েল উচ্চ বিদ্যালয়ে তখন শুধুমাত্র
সাইন্স বিল্ডিংটা দুই কক্ষ বিশিষ্ঠ ছোট্ট বারান্দার এক তালা বিল্ডিং যা সবে মাত্র
নির্মিত হয়েছে। ফলে তাঁর এক কক্ষ অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাটির দোতালা
ভবনের উপরের কক্ষে দুরের কয়েকজন শিক্ষক থাকেন সিঁড়ির দক্ষিন পার্শের কক্ষে, আর
সিঁড়ির উত্তর পার্শের কক্ষে চাঁপাই থেকে আসা সাত আটজন বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র থাকে। বাঁকি
কক্ষগুলো উপর নিচ সবই ক্লাস রুম হিসাবে ব্যবহার হয়।
সব ছেলেরা দক্ষিণ
পার্শের গলি দিয়ে তাদের শ্রেণীর দিকে গেলেও রুহুল কিন্তু গেল উত্তরের গলি দিয়ে। অফিস
রুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় রুহুল একটি কাগজ
কোঁচকানো অবস্থায় দেখতে পেল। খুব আগ্রহ ভরে তুলে ভাঁজ গুলো সারাবার চেষ্টা করতে
লাগল। কাগজটির অনেক যায়গা ছেঁড়া, কিন্তু একি! সেই একই হাতের লেখা। ছেঁড়া অংশগুলি
জোড়া লাগাবার চেষ্টা করলো রুহুল কিন্তু পেল না। রুহুল যা পেল তা হলো----
--হুল,
আমি তোমাকে
---বাসি। এ কথা --- বলেছি কিন্তু তুমি --
শুধু স্বপ্নেই জানিয়েছ যে তুমি আমাকে ভাল--। সরাসরি বলবে ক--?
চা--
রুহুল তাড়াতাড়ি
কাগজটি পকেটে ভরে, দ্রুত পাঁ চালালো কল পাড়ের দিকে। যেমন তেমন করে পাঁ টা কোন রকমে
ভিজিয়ে চলে গেল ক্লাসে। সবাই বলল—
কিরে? সাথে থাকতে
থাকতে কখন পিছিয়ে পড়লি?
রুহুল পাঁ এর
দিকে ইশারা করে বলল- কলেত গেলঝিনু পাঁ ধ্যুতে।
তখনও ক্লাসের সময়
শুরু হয়নি। আর রুহুলের মনটা ছটফট করছিল আজকের পাওয়া চিরকুটটা একবার ভাল করে পড়ার
জন্য। কিন্তু ক্লাসের মধ্যে তা করা সম্ভব নয়। তাই পকেটে হাত ভরে একবার পরিক্ষা করে
নিল চিরকুটটা ঠিকমতো আছে কি না। তারপর বাইরে বেরিয়ে গেল। জনি বলল—
জনিঃ এই রুহুল
কুনঢে য্যাচ্ছিস?
রুহুলঃ পেশাব কৈরতে।
তখন স্কুল মাঠের
দক্ষিন পুর্ব কোনে একটি মাত্র পায়খানা ছিল । সেখানে ছাত্র শিক্ষক সবাই যেত। ফলে সারাক্ষণ সিরিয়াল লেগেই
থাকতো। তাই ছেলেরা বেশীর ভাগ সময় প্রশাব
করার প্রয়োজন হলে পুকুর পাড়ের দিকে চলে যেত। রুহুলও তাই করল। পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে
রুহুল চলে গেল। ঢাল বেয়ে কিছু নিচে নেমে গেলে স্কুল মাঠ থেকে আর দেখা যায় না। এমন
যায়গায় রুহুল একটি বাবলা গাছের নিচে বসে চিরকুটটা বের করলো।
--হুল,
আমি তোমাকে
---বাসি। এ কথা --- বলেছি কিন্তু তুমি --
শুধু স্বপ্নেই জানিয়েছ যে, তুমি আমাকে ভাল--। সরাসরি বলবে ক--?
চা--
এটিতে রুহুল এর “রু”
নাই। তারপরেও মাঝে মাঝে অনেক শব্দ নাই, কোনটার
বা অর্ধেক আছে। সবশেষে চামেলীর “মেলী” নাই। রুহুল বারবার পড়তে থাকলো। সে লক্ষ করলো
গত রাতের স্বপ্নের কথাও উল্লেখ আছে। স্বপ্নে সে চামেলীকে ভালবাসার কথা বলেছে, সেই
কথাও চামেলী তাকে এই চিরকুটটিতে জানিয়েছে। রুহুলের হার্টবিট আরো বেড়ে গেল। সত্যি
চামেলী তাকে ভালবাসে। নইলে এভাবে চিঠি
লিখতো না। চিরকুটটিতে অনেক শব্দ না থাকলেও রুহুল তাঁর আইডিয়া করে ঠিক শব্দটি বের
করে বারবার পড়তে থাকলো। তাঁর চোখের সামনে চামেলীর ছবি ভেষে উঠল। গত রাতে দেখা
স্বপ্নে সে চামেলীদের পরীরাজ্য ঘুরে এসেছে। এসব কথা কাউকে বলা যাবে না। আর চিরকুট গুলোও খুব ভাল করে
রাখতে হবে, যেন কারো হাতে গিয়ে না পড়ে।
হঠাৎ ক্লাসবেল
বেজে উঠলো। রুহুল তড়িঘড়ি চিরকুটটি ভাঁজ করে পকেটে ভরে দৌড় দিল ক্লাসের দিকে।
রুহুক পড়াশোনায়
খুব ভাল ছাত্র নয়। তাঁর পরও গত রাতে ক্লাসের কোন পড়া সে তৈরি করে নি। সেজন্য আবস্য
তাঁর মনে কোন আফসোস নেই। মনে একটিই সান্তনা সাথে আছে চামেলীর দেয়া জাদুর চিরকুট।
এটি থাকলে নিশ্চয় চামেলী তাকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।
যথানিয়মে ক্লাস
শুরু হল। প্রথম পিরিয়ড ইংরেজী। স্যার
আসলেন। রশীদ স্যার। খুবই নরম মনের মানুষ। পড়ান খুব ভাল। তিনি প্রথমে হাতের লেখার
খাতাগুলিতে সাইন করে দিলেন। কিন্তু সেই খাতার মধ্যে রুহুলের খাতা ছিল না। তাঁর পরও
স্যার জিজ্ঞাসা করলেন না কার কার খাতা নাই। অন্যান্য দিন জিজ্ঞাসা করেন।
এর পর বই বের করে
একে একে উচ্চ স্বরে পড়তে বললেন। পড়া শুরু হল সামনের দিক থেকে। রুহুল সব পেছনের
ব্রেঞ্চে বসে ছিল।আন্যান্য দিন বেছে বেছে যাকে ইচ্ছা পড়তে বলতেন। আজ তিনি তা করলেন
না। সিরিয়ালি পড়তে বলছেন। ফলে রুহুল অন্যান্য ছেলেরা যখন পড়ছিল, সে বারবার ভাল করে
বই দেখছিল আর অর্থ গুলো শিখে নিচ্ছিল। পড়া রুহুলের নিকট আসতে আসতে তাঁর পড়া ও অর্থ
দুটোই বেশ ভাল ভাবে হয়ে গেল।
স্যার রুহুলকে
পড়তে বললে রুহুল বেশ সুন্দর করে পড়ে ফেলল। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে তাঁর পড়া
বেশ ভাল হওয়ায় স্যার তাঁর বেশ প্রসংশা করলেন, এবং ধন্যবাদ দিলেন। স্যারের ধন্যবাদ
পেয়ে তাঁর মন আনন্দে ভরে গেল। সে প্রায় প্রতি ক্লাসে স্যারদের বকা খান নইতো পিটুনি
খান। আজ বাড়িতে মোটেও পড়া শোনা করেনি। তবুও ক্লাসে তাঁর
পড়া খুব ভাল হয়েছে। রুহুল ভাবল সবই হচ্ছে সেই চিরকুটের বদৌলতে। রুহুল মনে মনে
ভাবলো যাক এখন থেকে আমার আর কোন ভয় নাই। দেখি আজ সব ক্লাসের পড়া যদি ভালভাবে হয়ে
যায় তাহলে আর কোন সন্দেহই থাকবে না।
পরের ক্লাস বাংলা
দ্বিতীয় পত্র। আসলেন জার্জিস স্যার। আজ কি পড়া ছিল রুহুল জানেই না। পাশের বন্ধু
নয়নের কাছে জেনে নিল আজ ভাব সম্প্রসারন পড়া আছে।
ছোট ছোট বালুকনা
বিন্দু বিন্দু
জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ
সাগল অতল।
স্যার আজ কি ভেবে
দশ মিনিট পড়ার টাইম দিলেন। ফলে রুহুল ব্যাকরণ বইটা বের করে পড়তে থাকলো। দশ মিনিটে সে প্রায়
দশবার পড়ে ফেলেছে।
এবার স্যার খাতা
বের করে লিখতে বললেন। ফলে সকল ছাত্রছাত্রী লিখতে শুরু করলে রুহুলও লিখতে শুরু
করলো। আশ্চর্যের বিষয় আজ যেন তাঁর কলম থামছেই
না। সবে মাত্র পড়াগুলি রাতের স্বপ্নের মতই তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল। ফলে প্রায় দশ মিনিটের
মধ্যে লিখে ফেলল। তাঁর হাতের লেখা খুব ভাল নয়। তবুও আজ প্রথম সে একটি ভাবসম্প্রসারণ সম্পূর্ণ
লিখতে পেরেছে। তাই সেও যেমন আশ্চর্য হল তেমন ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে এমনকি স্যারও
খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ দিলেন। স্যার বললেন দেখতো , কে বলেছে রুহুল পড়া পারে না,
তাঁর হাতের লেখা ভাল না হলেও সে প্রায় এক পৃষ্ঠা লিখেছে। যেখানে তোমরা লিখেছ হাফ
পৃষ্ঠা। ধন্যবাদ রুহুল এভাবে পড়াশোনা করলে তুমি অনেক ভালো করবে। অন্যান্য দিন হলে
এতক্ষনে ফাঁকা খাতা দেখানোর জন্য হয়তো দুচারটা চড় থাপ্পড় অথবা কান মলা খেত। আজ
স্যারের মুখে নিজের সুনাম শুনে আনন্দে বুকটা ভরে গেল।
-----চলবে----
আসছে আগামী পর্বঃ০৫। সাথে পাব আশাকরি।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন