1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ "ছেঁড়া চিরকুট" পর্বঃ-তিন

(নতুন পর্ব)  

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ “ছেঁড়া চিরকুট”

----খোশবুর আলী

পর্বঃ ০৩

তারিখঃ ০৪/০৭/২০২০

রুহুল হাঁসফাঁস করতে করতে বিছানায় উঠে বসল। তখন পুব আকাশে সূর্য  সবেমাত্র উঁকি দিতে শুরু করেছে। জানালা দিয়ে সেই সোনালী আলো তাঁর বিছানার  একাংশ রাঙিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। কিছুক্ষনের মধ্যে তাঁর সুমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ভয়টা কেটে গেল আর মানস পটে ভেঁসে উঠল সেই মিষ্টি স্বপ্নের মুহুর্তগুলো। আহা! সত্যি যদি এমন হতো, কত মজায় না হতো। বিছানা থেকে নেমে ছুটে গেল তাঁর স্কুল ব্যাগের নিকট। পকেটে হাত ভরে বের করে আনলো সেই চিরকুটটি যে চিরকুট তাকে এমন সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখালো সেই চিরকুটটি এখন তাঁর নিকট আরো মূল্যবান হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেখাগুলো সে বারবার পড়তে লাগল। বাহির থেকে মায়ের কন্ঠ ভেসে এলো----

মাঃ রুহুল, এই রুহুল, ঘুম থেকে উঠ বাবা, হাত মুখ ধুয়্যা একটু পড়তে বস, ম্যালা বেলা হল যে, কঘন খাবি আর কঘন স্কুলেত যাবি?

আসলে তখনও স্কুলে যাবার জন্য খুব একটা বেলা হয়ে যায়নি, কিন্তু মা রুহুলকে ঘুম থেকে জাগাবার জন্য এমন করে ডেকে থাকেন।

রুহুল বড় করে একটি হাঁয় তুলে শরীরটাকে আড়মোড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি চিরকুটটা ব্যাগের পকেটে রেখে বলল—

রুহুলঃ উঠিছি মা, এইতো অ্যাসছি।

মাঃ ভককর‍্যা(তাড়াতাড়ি) আয় বাবা।

ঘুম থেকে উঠলে রুহুলের মনটা সাধারনত খিটখিটে হয়ে থাকে, কোন কিছুই করতে চায়না, চুপচাপ বসে থাকে, কিন্তু আজ তাঁর মনটা বেশ ফুরফুরে।হাঁসিমুখে ছুটে গেল কলপাড়ে। চাপকল চেপে হাত মুখ ধুয়ে নিল। মনের অজান্তেই গুনগুন করে গান গাইছিল।হঠাৎ তাঁর মনে পড়ল সবার আগে স্কুলে যেতে হবে। ক্লাস রুমের চারিদিক খুঁজে দেখতে হবে। তাই কলপাড় থেকে ছুটে এসে মাকে বলল খাবার দিতে।

মাঃ এইতো ভাত রেডি কৈরছি বাবা,  অ্যাজ এত সকালে স্কুলেত যাওয়ার পাড়াপাড়ি ক্যান? অন্য দিন তো য্যাতেই চ্যাস না। 

রুহুলঃ না, মা। এমনি।

মাঃ এ্যাকটু বস। দিচ্ছি।

রুহুলঃ আচ্ছা। বলে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলো। ব্যাগের কাছে ছুটে গিয়ে চিরকুটটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। পড়তে থাকলো বারবার। যতবার পড়ছে ততই  যেন আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। আজ সে তাঁর সহপাঠি বন্ধুদের সাথে স্কুলে যাবে না। সবার আগে যাবে। মনের মধ্যে তাঁর দুইশত কিলোমিটার বেগে বয়ে চলছে এক বিশাল টর্ণেডো। অশান্ত মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে। মাঝে মাঝে রাতের স্বপ্নের কথা মনে হলেই মনটা তাঁর খুশিতে নেচে উঠছে। বয়সটাই হইতো এমন। সবে মাত্র চৌদ্দ বছরে পাঁ দিয়েছে সে। বয়োসন্ধি কাল চলছে তাঁর। যে কোন মেয়েই এখন তাঁর চোখে সুন্দরী। মনে মনে আকাঙ্ক্ষা জাগে যে কোন মেয়েই তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিক না কেন, দিলেই সে সাদরে গ্রহন করবে। এমন উত্তাল হাওয়ার মত প্রেম নেশায় আচ্ছন্ন, আর এমন মুহুর্তে পেয়েছে সে চামেলীর লেখা চিরকুট। ইতিমধ্যে সে চামেলীকে স্বপ্নে দেখেছে। তাঁর মনের মধ্যে আঁকা চামেলীর সাথে স্বপ্নের চামেলীর হুবহু মিল রয়েছে। চিরকুটটি হাতে নিলেই তাঁর মনের মধ্যে এমন তুফান শুরু হচ্ছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই স্বপ্ন দেখতে থাকে সে। হঠাৎ সম্ভিত ফিরে পায় মায়ের ডাকে।

মাঃ রুহুল, আয় বাবা তুর ভাত রেডি।

রুহুলঃ হ্যাঁ মা। অ্যাসছি।

চিরকুটটা আবার ব্যাগের পকেটে রেখে, খাবার খেতে চলে গেল।

খাবার খেয়ে জামা কাপড় পরে, স্কুল সময়ের প্রায় দুই ঘন্টা আগে রুহুল স্কুলের পথ ধরলো। বৈদ্যপুর থেকে কৈল হাইস্কুল প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশী দূর। পাঁচ ছয়জন ছেলেমায়ে বৈদ্যপুর থেকে কৈল হাইস্কুলে যায়। গ্রাম্য কাঁচা রাস্তা, গরিব ছেলেমেয়ে সবায়। কারোরি সাইকেল নাই। ফলে সকলে মিলে একসাথে পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়।

কিন্তু আজ রুহুল সবার আগে বেরিয়েছে। তাঁর উদ্দেশ্য কেউ জানে না। মাঝ পথে রুহুল সেই শিশু গাছটির নিকট পৌঁছালে তাঁর রাতে দেখা স্বপ্নে কথা মনে হল। তাই সে সেখানে থেমে চারিদিক দেখে নিল। এবার ভাবলো আজিমের কুঁড়ির দক্ষিন পার্শের ঝোপের আড়ালটা একবার দেখে আসবে। তাই গাছের নিচেই শিকড়ের উপর ব্যাগটি রাখলো। কিন্তু কুঁড়ির পাড়টি এতো বেশি কাঁটাযুক্তু জঙ্গল যে, এপাশ হতে ওপাশে যাওয়ার কোন উপায় নেয়। একটি মাত্র উপায় আছে আর তা হল, দূর দিয়ে ঘুরে আইল ধরে দেখে আসা। ঝোপের ভেতর অনেক বিপদ আপদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু গত রাতের দেখা স্বপ্নের চামেলী তাকে বারবার আহবান করছে একবার দেখে আসার জন্য। তাই সে ঘুর পথে আইল ধরে ঝোপের অপর প্রান্ত দেখার উদ্দেশ্যে চলে গেল।

 

ঝোপের কাছাকাছি গিয়ে সে কিছুই দেখতে পেল না, কিন্তু ঝোপটা একটু নড়তে দেখল। রুহুল সাবধানে আর একটু এগিয়ে গিয়ে গলা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করতেই ফোঁস করে তেড়ে এল একটি বিশাল গোখরা সাপভয়ে রুহুল পেছন ফিরে দিল ছুট। আসোলে সেখানে দুটি গোখরা সাপ সে সময় প্রেম লিলায় ব্যাস্ত ছিল। এমন সময় তারা অন্য কোন প্রাণী বা মানুষকে কাছে পেলে আক্রমন করে বসে। রুহুলের ভাগ্য ভাল সে কোন রকমে দেখতে পেয়েছিল , তাই প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছে। হাঁফাতে হাঁফাতে সে তাঁর বই এর নিকট ফিরে এলো। গাছের শিকড়ে সে ধপ করে বসে পড়লো। মনে মনে ভাবলো চামেলীতো পরী। এরা সব কিছুর রূপ ধারন করতে পারে বড়দের কাছ থেকে সে গল্পে শুনেছে। তাই মনে মনে ভাবলো আসলে এই সাপ আবার সেই চামেলী নয় তো? কিন্তু চামেলী তাকে ভালবাসে। তাহলে সাপ হয়ে তাড়া করলো কেন? অনেক কিছু ভাবনা তাঁর মনে উদয় হতে লাগলো। ব্যাগের পকেট থেকে সেই চিরকুটটি বের করলো। কয়েকবার পড়ে নিল। চিরকুটটি হাতে নিয়ে মনে মনে ভাবলো এটা তো চামেলীর দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন, এটা হাতে থাকলে ঐ সাপটি যদি সত্যি সত্যি চামেলী পরী হয়, তাহলে আমাকে আর তাড়া করবে না নিশ্চয়। তাহলে চিরকুটটি পকেটে নিয়ে আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। যেই ভাবা সেই কাজ। চিরকুটটি পকেটে ভরে, বুকে সাহস নিয়ে সে আবার আইল ধরে সেখানে গেল। একটু দূর থেকেই সে খুব সাবধানে পাঁ ফেলছিল। এবার সে কোন কিছুই নড়াচড়া করতে দেখতে পেল না। চুপ করে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো, না তোবুও কিছুই ঘটলো না। তাই সে সাহস নিয়ে আরেকটু কাছে গেল। কিন্তু কিছুই সে দেখতে পেল না। আসোলে সেই সাপগুলি নিরাপদে তাদের প্রেমলিলা চালিয়ে যাবার জন্য হয়তো গর্তে প্রবেশ করেছে। কিন্তু রুহুল ভাবল অন্য কিছু। হ্যাঁ, এটাই চামেলী পরীর দেয়া চিরকুট, তাই এটি আমার সাথে থাকার জন্য আমার আর কোন ক্ষতি সে করলো না। এখন থেকে এটি আমার সাথে রাখব, তাহলে আর কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবে না। এবার সে বীর দর্পে ফিরে এলো তাঁর স্কুল ব্যাগের নিকটস্কুল ব্যাগটি তুলে নিয়ে স্কুলের দিকে যেতে লাগল। এতক্ষনে তাঁর প্রায় আধাঘন্টা সময় কেটে গেছে। তাঁর কিছু সহপাটি ইতিমধ্যে সেই রাস্তায় চলে এসেছে। তাঁরা রুহুলকে সামনে যেতে দেখে হাঁক ছাড়লো---

-এই রুহুল, থামনা। সবাই একসাথে যাব।

রুহুল হাঁক শুনতে পেল বটে কিন্তু সে না থেমে, বরং আরও জোরে পা চালালো। তাঁর উদ্দেশ্য সবার আগে স্কুলে পৌঁছা। ইতিমধ্যে তাঁর কিছু দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু দেরি হলেও মনে মনে রুহুল খুশি এই ভেবে যে এটি সত্যি চামেলী পরীর দেয়া চিঠি।

 

পেছন থেকে তাঁর বন্ধুরা ভাবলো, রুহুল থামছে না কেন? অন্য দিন তো এমন করে না। কিছু একটা ঘটেছে। তাঁরা আবার ডাকলো, কিন্তু রুহুল না শোনার ভান করে এগিয়ে চলল। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে জনি সবচেয়ে দুষ্টু, সে রুহুলকে ধরার জন্য দৌড়াতে লাগল। রুহুল তখনও না শোনার ভান করে এগিয়ে চলল। সে বুঝতে পারলো কেউ একজন তাঁর দিকে দৌড়ে আসছে। একবার ভাবল পালাবে, আবার ভাবল , না পালালে তাঁরা তাকে আরো বেশি সন্দেহ করতে পারে। তাই স্বাভাবিক  হওয়ার চেষ্টা করল। জনি কাছে আসলে সে পেছন ফিরে একবার দেখে বলল---

রুহুলঃ ওহ জনি? তা দৌড়্যাচ্ছিস ক্যান ভাই, আমাক থামতে বুললেই তো হয়।

জনিঃ তুক কতবার ড্যাকনু,  দাঁড়ালু না ক্যান?

রুহুলঃ কঘন ড্যাকলু , হামি শুনিনি তো?

জনিঃ তুই অ্যাজ হামারেক ডাক্যা আসিসনি ক্যান?

রুহুলঃ আর সে কধা বুলিশ ন্যা ভাই, হামি তো প্রতিদিন দেরি করি, তা অ্যাজ হামার মাও ভোর র‍্যাত থ্যাক্যা হামার পাছে ল্যাগ্যা আছে। রুহুল উঠ ভাত খা,  স্কুলেত যা। এত ঘ্যানর ঘ্যানর করলো জি রাগ কর‍্যা হ্যাটতে লাগিছি। ঠিক আছে তুই যঘন অ্যাসা পড়িছি্স, চ এক সাথেই যাই।

জনিঃ ওহ, তাই, চ ।

তাঁরা হাঁটতে লাগলো স্কুলের দিকে। রুহুল মনে মনে ভাবল জীবনে প্রথম আজ জনিকে সে বোকা বানাতে পেরেছে। তাই মনে মনে বেশ খুশিই হল । ভাবলো সবই হইতো সেই চিরকুটের বদলৌতে হচ্ছে। তাই জনির অজান্তেই চামেলী পরীকে ধন্যবাদ জানালো সেই চিরকুটটি তাকে উপহার দেওয়ার জন্য।

-----চলবে, ---- আসছে আগামী পর্বঃ ০৪।

 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।