ধারাবাহিকঃ উপন্যাসঃ - “ডাঙ্গুলী” --খোশবুর আলী (পর্বঃ – “পাঁচ”)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
“পাঁচ”
সোহেল চৌধুরী লোকজনের ভিড় ঠেলে তাঁর শিটের নিকট গিয়ে দেখলেন, সেখানে অন্য লোক বসে আছে, মনা নাই। তাই তিনি সীটে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন—
সোহেল চৌধুরীঃ ভাই, এখানে একটি আট নয় বছরের শিশু ছিলো কোথায় গেল।
লোকটি বললঃ কেন ? আপনার সাথের লোকই তো ওকে নিয়ে চলে গেল।
সোহেল চৌধুরীঃ আমার সাথের লোক মানে?
লোকটি বললঃ ওরা তো তাই বলল। শিশুটিকে চকলেট খাওয়াল। কোলে নিয়ে আদর করল, তারপর শিশুটি ঘুমিয়ে গেলে তাঁরা ওকে আপনার নিকট নিয়ে যাবে বলে চলে গেল।
সোহেল চৌধুরীর বুঝতে অসুবিধা হল না যে, মনা, শিশু পাঁচার কারীর হাতে পড়েছে। কিন্তু ট্রেন ততক্ষনে অনেকদুর চলে গেছে।
সোহেল চৌধুরীর মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।
একজন কে খুঁজতে গিয়ে আরেক জনকে হারিয়ে ফেললাম? একদিকে শিশুটি তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, তাঁর বাবাকে হারিয়েছে আবার সে নিজেও এখন বিপদের মুখে। কি করা যায়। অনেক কিছু সে তাঁর মানস পটে দেখতে পাচ্ছে। যদি পাঁচার কারিরা ভারতে পাঁচার করে ফেলে, তখন তো আর কিচ্ছু করার থাকবে না। আর বাড়ি গিয়ে কোন ব্যবস্থা করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে, তাই সে সিদ্ধান্ত নিল সামনের বাঘা ষ্টেশনে নেমে বাঘা থানায় একটি ডায়রি করবেন। পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিবেন কিছু পুরস্কারের ঘোষনা দিয়ে। এতেও যদি শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়।
কিছুক্ষন পরেই ট্রেন বাঘা ষ্টেশানে এসে থামল।
সোহেল চৌধুরী নেমে একটি রিক্সা ডেকে ছুটলেন বাঘা থানায়।
থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের রুমে ঢুকতেই সে হতবাক।
একি, ওসির চেয়ারে বসা পুলিশ অফিসার তাঁর কলেজের বন্ধু মারুফ।
সে সোহেল চৌধুরীকে তার রুমে ঢুকতে দেখেই চিনে ফেলেছে তাই, ওঠে দাঁড়িয়ে বলল-
আরে সোহেল কেমন আছিস? কি মনে করে হঠাত আমার অফিসে? কি করে জানলি আমার এখানে পোষ্টিং । তোর মুখটা এমন শুকনা কেন? কোন বিপদ আপদ হয়েছে নাকি?
সোহেল চৌধুরীঃ আরে থাম থাম। এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে উত্তর দেব কোনটার।
পুলিশ অফিসারঃ তোর কোন উত্তর দিতে হবে না। বস চা খা। পরে শুনব তোর কথা। সেট্রি; আমার রুমে দু কাপ চা আর বিস্কুট পাঠিয়ে দাও।
সেন্ট্রিঃ ওকে স্যার, বলে চলে গেল।
সোহেল চৌধুরী ট্রেনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল পুলিশ অফিসার কে। আর অনুরোধ করল বন্ধু যে করেই হোক শিশুটিকে উদ্ধার করতেই হবে তোকে।
পুলিশ অফিসারঃ চিন্তার কারন নাই বন্ধু, আমি প্রথমে বর্ডার এরিয়া গুলিকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমাদের এলাকায় একটি গ্রুপ নারী ও শিশু পাচার করছে বলে আমরা খবর পেয়েছি কিন্তু কেউ আমাদের নিকট অভিযোগ নিয়ে আসেনি ফলে আমরা কোন ব্যাবস্থা নিতে পারিনি।
মুন্সি সাহেব এদিকে আসুন, একটি শিশু মিসিং ডাইরি লিখে নিন। লিখবেন আনুমানিক আট/নয় বছরের ছেলে তার বাবার সাথে রাজশাহী হতে ট্রেনে নাটোর যাবার পথে তার বাবা টয়লেটে যায়, আর তখনই আড়ানী স্টেশানে ট্রেন থামে। সেই সুযোগে কে বা কারা শিশুটিকে অচেতন করে নিয়ে পালিয়ে যায়। শিশুর পিতার নাম দিবেন, সোহেল চৌধুরী, ঠিকানা, নাটোর সদর।
এবার তিনি সোহেল চৌধুরীকে বললেন—
সোহেল তোর ফোন নাম্বারটি দে।
সোহেল চৌধুরী একটি কাগজে তার বাসার ফোন নাম্বাটি লিখে দিল।
আজ তুই যখন অভিযোগ করলি, তাহলে এক কাজ কর থানার পাসেই দৈনিক সোনালী সংবাদের অফিস আছে ওখানে পত্রিকায় একটি মিসিং বিজ্ঞপ্তি দিবি তাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরোস্কারের ঘোষনা দিবি। আর তোর বাসার ফোন নাম্বার দিবি নিচে। পাচার কারীরা লোভে তোকে ফোনে কল করলেই আমাকে জানাবি। এর পর আমার কথা মত কাজ করলেই আমরা তাদের কে ধরে ফেলবো ইনশাআল্লাহ। এর মধ্যে চা বিস্কুট এলো। তাই দুজনে চা খেয়ে, পুলিশ অফিসার, সোহেল চৌধুরীকে নিয়ে নিজেই পত্রিকা অফিসে গিয়ে কথামত একটি বিজ্ঞপ্তি দিলেন।বিজ্ঞপ্তি পরের দিন কাগজে ছাপা হবে, সুতরাং আজ সেখানে বসে থাকার কোন দরকার নাই। মারুফ সাহেব সোহেল চৌধুরীকে তার কোয়াটারে থাকার আমন্ত্রন জানালো। বলল বন্ধু অনেকদিন পর তোর সাথে দেখা, চল তোর ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দি। কিন্তু সোহেল চৌধুরীর মনটা খুব খারাপ দেখে বন্ধুর পিঠে হাত রেখে সান্তনা দিয়ে বলল বন্ধু মন খারাপ করিস না, আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা, তুই শিশুটিকে খুব ভালবেসে ফেলেছিস। আমি থাকতে তোর কোন চিন্তা নাই। যা করার আমি করছি।
কিন্তু সোহেল চৌধুরী আজ আর থাকতে চাইলো না। তাই অফিসার বন্ধুর নিকট হতে বিদায় নিলেন।
ষ্টেশানে এসে পরের গাড়িতে তিনি বাড়ি ফিরে আসলেন। বাড়ি পৌছাতে তাঁর রাত প্রায় দশটা বেজে গেল।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন