ধারাবাহিক উপন্যাসঃ- উপন্যাসঃ - “ডাঙ্গুলী”--খোশবুর আলী (পর্বঃ – “দুই” )
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
“দুই”
গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটছে তাঁরা। সারাদিন গরু
চরিয়ে ক্লান্ত মনা, তাই বাবার সাথে হাঁটতেও পারছে না। ছোট ছেলে সে, বাবা জোরে হাঁটছে ফলে তাঁকে প্রায়
দৌড়াতে হচ্ছিল। অন্ধকার রাত রাস্তার উচু নিচু কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না, তাছাড়া রাস্তায় তাড়াতাড়ি এগোবার জন্য কখনও মেঠো সড়ক, কখনও বন বাদাড় আবার কখনও ধুধু প্রান্তর
পেরিয়ে তাঁরা যখন তালন্দ হাটে পৌঁছালো
তখন মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আজান শোনা গেল।
ততোক্ষনে মনা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ফলে রাস্তার পাশে একটি টিউবওয়েল এর নিকট বিশ্রামের জন্য বসল। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে সঙ্গে আনা কিছু গমের ছাতু গামছার আঁচলে
মন্থন করে খেতে খেতে সকাল প্রায় হয়ে গেল। খাবার পরে পানি পান করে তাঁরা আবার হাঁটা
শুরু করল তানোর অভিমুখে।
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনা বাবার সাথে হাঁটতে পারছে না, তাই সে তার বাবাকে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল—
মনাঃ আব্বা আর কদ্দুর?
বাবাঃ এইতো চল্যা অ্যালঝি ব্যাটা।
মনাঃ আর হ্যাঁটতে পারছি না আব্বা।
বাবাঃ ঐ গাছটা দেখতে প্যাচ্ছিস, ওঢি গেলে পাকা
রাস্তা পাওয়া য্যাবে। তঘুন আর হাঁটা ল্যাগবে না।
মনা সেই গাছটার দিকে তাকিয়ে বাবার সাথে চলতে থাকল।
পথ যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। আসলে তানোরের কুঠিপাড়ার সেই পুরাতন বটগাছটি প্রায়
তিন মাইল দূর থেকে দেখা যায়। যখন তাঁরা তানোর পৌঁছালো ততক্ষনে প্রায় দশটা বেজে গেল।
তানোর থানা মোড়ে তাঁরা একটি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এই প্রথম মনা বাস দেখল। এর আগে বাসে মানুষ চড়ে দূরে কোথাও যায়, সে কথা মনা বাবার মুখে শুধু শুনেছিল। আজ প্রথম সে বাসে উঠলও বটে। কিচ্ছুক্ষন পরে বাস রওয়ানা হল রাজশাহী অভিমুখে। আঁকাবাঁকা আর ভাঙ্গা রাস্তা। হেলে দুলে চলছিল বাস। মনা বাবার কোলে বসেছিল। সীটে বসলে তার ভাড়া দিতে হবে তাই এটিই ছিল বিকল্প ব্যাবস্থা। মনার বাবার কাছে বেশী টাকাও নাই। বাসটি খুব ছোট্ট আর যাত্রি বেশী হওয়ায়, ছাদেও অনেক লোক উঠল। প্রায় ঘন্টা খানেক চলার পর হারদর বিলের ভাঙ্গা যায়গার গর্তে পড়ে বাসের চাকা গেল ফেটে। ফলে সব যাত্রিকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হল। মনা ও তার বাবাও নিচে নামল। মনা তাঁর বাবাকে বলল---
মনাঃ আব্বা বাস আর য্যাবে না?
বাবাঃ কে জানি।
মনাঃ আর কদ্দুর য্যাতে হবে হামারেক।
বাবাঃ আজ দিনমান যাই তো।
মনাঃ বাস না গেলে হ্যাঁটা য্যাতে হোবে?
বাবাঃ তাইতো মুনে হৈচ্ছে।
ভাগ্যিস বাসে
আরেকটি অতিরিক্ত চাকা ছিল । মনার বাবা একজনকে জিজ্ঞাসা করল-- ভাই বাস কি ঠিক হোবে?
লোকটি বলল, হ্যাঁ।
মনা গ্রামে গরুর গাড়ির চাকা বদলাতে
দেখেছে। কিন্তু এমন বড় একটি বাসের চাকা কিভাবে বদলাবে তা দেখার জন্য বাবার কাছে
বায়না করে বসল। বাসের ভেতর থেকে কি একটা লোহার জিনিস বের করে তাঁরা বাসের নিচে
চাকার পাশে লাগালো, তারপর একটি ছোট্ট চাকা ঘুরাতে থাকলো, ফলে কিছুক্ষন পরে বাসের ফাটা চাকাটি উপরে উঠে গেল। মনা রীতিমত অবাক। এই ছোট জিনিসটা গোটা বাসটাকেই উপরে তুলে দিল। তারপর তাঁরা সবগুলো
নাট খুলে চাকাটি সরিয়ে ভালো চাকাটি লাগালো । এতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগল। আবার
সব যাত্রিরা বাসে উঠে যে যার যায়গায় বসল।
বাস আবার যাত্রা করল। রাজশাহী পৌঁছাতে তাদের বিকেল হয়ে গেল। মনার খুব ক্ষুধা
পেয়েছে। তাই তার বাবাকে বলল—
মনাঃ আব্বা, ক্ষিদ্যা লাগিছে।
বাবাঃ চ, ঐদ্দ্যা__, ট্রেন
ইস্টিশন। ওঢি য্যায়া খাব।
মনা ট্রেনের নাম শুনেছে, কখনও দ্যাখেনি। তাই উতসুক হয়ে বাবার
সাথে ইস্টিশনের দিকে হাঁটা দিল । সেখানে বহুত মানুষ। যে যার কাজে ব্যাস্ত। বিভিন্ন হকারের হাঁক
ডাক। একজন হকার তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, এই রুটি লাগবে রুটি----? এই রুটি লাগবে রুটি----?
কিন্তু ইস্টিশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। তাই তাঁরা
আগে ট্রেনে উঠে নিজেদের জন্য যায়গা করে
নিল। তাঁদের পাশে শার্ট প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক বসেছিল। মনার বাবা লোকটিকে বলল স্যার, হামার মনাক একটু দেঘবেন, হামি ওর ক্যানে কিছু খাওয়ার জিনিস
লিয়্যা আসি। লোকটি সম্মতি জানালে মনার বাবা মনাকে রেখে ট্রেন থেকে নিচে নেমে গেল। নিচে নেমে এদিক ওদিক ঘুরে মনার
বাবা এক টাকা দিয়ে দুটি পাওরুটি আর আট আনা দিয়ে চারটি কলা কিনে, একটু পানি পান করার জন্য ইস্টিশনের টিওবয়েলের
নিকট গেল ।
সবে মাত্র টিউবওয়েল হাতল চেপেছে এর মধ্যে হুইসেল দিয়ে ট্রেন
ছেড়ে দিল। ফলে সে দৌড়দিল ট্রেনের দিকে। ট্রেন তখনও ধিরে ধিরে চলছিল। এক হাতে খাবার
থাকায় এক হাতে ট্রেনের দরজার হাতল ধরে ট্রেনের সিঁড়িতে তড়িঘড়ি করে পাঁ রেখতে গিয়ে
হাত পাঁ দুটোই ফসকে নিচে পড়ে গেল। এক মুহুর্তের মধ্যে ট্রেনের একটি চাকা
দ্বিখন্ডিত করেদিল তার দেহটি। ট্রেনের যাত্রীরা জানতেই পারলোনা ঘটনাটি। ট্রেন ছুটে
চলল তার গন্ত্যব্যে।
--------চলবে, আগামী পর্ব: ০৩
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন