1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

“একটি টাকি মাছ”




“একটি টাকি মাছ”
মোঃ খোশবুর আলী----১০/১১/২০১৯

প্রায় বছর খানেক আগের কথা। আমার ভাতিজার চাকরীর ব্যাপারে বাস যোগে ঢাকা জাচ্ছিলাম। সম্ভবত সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসের দিকে হবে, অর্থাৎ বর্ষার পরে, যখন ডোবা-নালা খাল বিল ভোরে থাকে ঠিক এমন সময়। হানিফের গাড়িতে উঠেছিলাম সকাল ১০.০০ টায় রাজশাহী টার্মিনাল থেকে। জানালার পাশে ছিল আমার সিট তাই ডান পাশের মনোরম দৃষ্য দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। আমাদের গাড়ি কতদুর পৌঁছেছে জানিনা হঠাত বাস থামার কারনে আমার ঘুম ভেঙে গেল, বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম রাস্তার পাশ থেকে সব নিচু বিলটা পানতে থৈ থৈ করছে। পানির মাঝে মাঝে দুয়েকটা বাড়ি, দেখে মনে হচ্ছে যেন পানিতে ভাষছে। খবর নিলাম বাস দাঁড়িয়ে কেন? তারা বলল ইঞ্জিনের সমস্যা হয়েছে ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। তাই যাত্রিরা অনেকে নিচে নেমে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছেন।বাইরের দৃষ্যটি খুব ভালই লাগল তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম। কিছুদুর এগোতেই চোখে পড়ল ফুটফুটে দুটি ছোট শিশু পানির ধারে বসে আছে। একটু এগিয়ে গেলাম তাদের কাছে। একটি মেয়ে , বয়স আনুমানিক ৩ বছর হবে, খুব সুন্দর চেহারা, গায়ে একটি মলিন ফ্রগ আর হাফ প্যান্ট প্ররে আছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো, কান পর্যান্ত ঢেকে আছে।
আর ছেলেটির বয়স আনুমানিক ৭ বছরখালি গায়ে, একটি ছেড়া হাফপ্যাট পরে আছে। দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না এরা অসহায় পথ-শিশু।আমি কাছে যেতেই মেয়েটি তার ভাইকে ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে কি যেন বলল, এবং তার ভায়ের গায়ের সাথে লেগে একদম জড়সড় হয়ে গেল। আমার একটু খারাপ লাগছিল শিশুটির অবস্থা দেখে। কাছে গিয়ে তাদেরকে অভয় দিয়ে বললাম,
বাবু কি করছ তোমরা?পানির ধারে বসে আছ কেন?
ছেলেটি বললঃ স্যার মাছ ধরছি ?
আমি বললামঃ কি দিয়ে মাছ ধরছ?
ছেলেটি বললঃ বড়সি দিয়ে।
আমি বললামঃ ওহ, তাই, তুমি মাছ ধরতে ভাল বাস না?
ছেলেটি বললঃ না স্যার। আমার বোন আমাকে কেঁদে কেঁদে বলল, ভাইয়া কতদিন মাছ খাইনি, মা বেঁচে থাকতে খেয়েছি।তাই ভিক্ষার টাকা দিয়ে একটা বড়সি কিনেছি, মাছ ধরার জন্য।
আমার বুঝতে অসুবিধা হল না যে এরা এতিম, অসহায় শিশু।
আমি বললামঃ মাছ পেয়েছ?
ছেলেটি বললঃ না স্যার, তবে পাব মনে হচ্ছে, বলতেই হাতের বড়সিটায় একটি টান দিতেই একটি টাকি মাছ উঠে আসল।
আমি তাদের পাসে বসে কথা বলছিলাম তাই মেয়েটি এখন আর ভয় না পেয়ে অনেকটা সাভাবিক হয়েছে।
মাছটি তার ভাইয়ের হাতে দেখে সেই কি খুশি মেয়েটি, যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। নিষ্পাপ মেয়েটির খুসি দেখে আমার মনটি জুড়িয়ে  গেল। ভাবলাম পৃথিবীর এরকম অসহায় শিশুগুলি অল্পতেই কত খুশি হয়, অথচ তাদের সেই অধিকার টুকুও আমরা দিতে পারি না।
ছেলেটি উঠে দাঁড়াল, আমি বললাম আর মাছ ধরবে না?
ছেলেটি বললঃ না।
আমি বললামঃ তোমরা থাক কোথায়? ছেলেটি হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল বাঁধের ওপর কিছু ছোট ছোট ঘরের দিকে।
ছেলেটি একহাতে মাছটি শক্তকরে ঘরে আছে আর অন্য হাতটায় তার বোনের হাত ধরে আছে। আমিও উঠে দাঁড়ালাম, ঠিক এমন সময় একটি প্রায় ২০ বছর বয়সি ছেলে ছুটে এলো ।

বলল, ব্যাটা মাছ ধরেছিস? দে মাছ দে, বলে এক চড় মারল ছেলেটির গালে। আমি তো হতবাক। বললাম এই ছেলে ওকে মারলে কেন?
এবার ছেলেটি আমাকে বলল, আপনি কি জানেন, এই জায়গাটা আমরা লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছি।

মেয়েটি ভয়ে কাঁদছিল আর তার ভাইকে বার বার বলছিল ভাইয়া মাছটা দিয়ে দাও, আমি আর তোমার কাছে মাছ খেতে চাইব না।কিন্তু ছেলেটি তখনও মাছটি শক্ত করে ধরে আছে।
আমি বড় ছেলেটিকে বললাম, তোমাকে আমি যদি মাছের দাম দিয়ে দি তাহলে, ঐ ছেলের হাতের একটা চড় তোমাকে খেতে হবে, রাজি?
ছেলেটি বললঃ কেন? চড় খাব কেন?
আমি বললামঃ কারণ তুমি বিনা কারনে ওকে মেরেছ। তোমরা লিজ নিয়েছ ভাল কথা, তোমরা কি এসব মাছের চাষ করেছ?
ছেলেটি বললঃ না। তবে আমরা মাছের খাবার তো দি, সেই খাবার খেয়ে এসব মাছ হয়।
আমি বললামঃ সেই জন্যই তো আমি মাছটার দাম তোমাকে দিতে চেয়েছি, আর চড়ের বদলে চড়।
এর মধ্যে আরও কয়েজন লোক এসে হাজির হয়েছিল, সবাই বলল, ঠিক বলেছেন।

এবার ছেলেটি আর কোন কথার জো না পেয়ে, রেগে বলল, এখুন যা দেখে নিব তোকে? হন হন করে চলে গেল সে, আমি বললাম, তোমার মাছের দামটি নিয়ে যাও। ছেলেটি কথার জবাব না দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এতক্ষনে মেয়েটির কান্না থেমেছে, আমি বললাম, বাবু তোমরা এই মাছটি নিয়ে যাও,
ছেলেটি বললঃ না, স্যার। ওরা আমাকে আবার মারবে, আমার তো কেও নাই দুনিয়ায়। তার কথাটি আমার কলিজায় তিরের মত বিধেছিল।
ভাবলাম, ওদের সাথে দন্দ করা বোধহয় আমার ঠিক হইনি।
তাই আমার সাতে শিশু দুটিকে আর দুইজন লোক সহ মাছের মালিকের নিকট গেলাম। প্রায় ২০০গজ দূরে একটি দোকানে শিশুটি আমাদেরকে নিয়ে গেল।দেখলাম মাঝ বয়সি এক লোক চা খাচ্ছে, আর তার পাশে ঐ ছেলেটি দাঁড়িয়ে। বুঝলাম আমাদের নামে নালিশ দেওয়া হহেছে ইতিমধ্যে। আমি প্রথমে সালাম দিয়ে লোকটিকে বললাম, এখানে আপনি মাছ চাষ করেন?
লোকটি বললঃ হাঁ।
আমি বললাম ভাই আপনি ঘটনা নিশ্চয় শুনেছেন, যাই হোক মাছটি দেখিয়ে বললাম, এই মাছটির যা দাম চাইবেন আমি দিয়ে দেব তবু মাছটি আমাকে দিতে হবে।
লোকটি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললঃ আপনার বাড়ি কোথায়?
আমি বললামঃ রাজশাহী।
লোকটি বললঃ সে জন্য এদের প্রতি এত দরদ। আমরা জানি এদের জ্বালা।
আমার সাথের দুজনও বললঃ ভাই ঠিক আছে, আমরা চাই আর এদের সাতে আমাদের বা আপনার লোকের কোন দন্দ না থাক, বলেন কত দিতে হবে?
লোকটি মুখ নিচু করে বললঃ ঠিক আছে টাকা দিতে হবে না, কিন্তু ওকে ভালভাবে নিশেধ করে দেন যেন আর মাছ না ধরে।
আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে সাথে মেয়েটিকে একটি বিস্কুটের প্যাকেট কিনে দিয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে ফেরত আসলাম। বাসের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আর কত দেরি, হেল্পার বলল, আর মিনিট বিশেক লাগবে।
তাই শিশু দুটিকে নিয়ে তাদের সেই ছোট ঘরটি দেখে গেলাম।
বেড়ি বাঁধের ওপর ছনের বেড়া আর পলেথিনের নিচে থাকে দুই ভাই বোন, বাবা তাদের মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে আরও ছোট থাকতে। মায়ের সাথে থাকত তারা। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের জন্য খাবার আনত, এই ভাবে চলত তাদের।
প্রায় ছয় মাস হল মা মারা যাবার পর তারা দুই ভাই-বোন মানুষের নিকট চেয়ে খায়, না পেলে না খেয়ে থাকে।
আমি ছেটির হাতে আরও ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে বিদায় নিতে চাইলে ছেলেটিকে মেয়েটি কি যেন বলল আমি বুঝতে পারি নি। তাই ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলে- সে বলল, আপনার সাথে মোসাফা করতে চাই আমার বোন
আমি বললামঃ ও তাই, এস এস। বলে হাত বাড়াতেই ছোট্ট মেয়েটি বাম হাতে বিস্কুট খেতে খেতে তার ডান হাতটি আমার হাত স্পর্শ করতেই আমার নিজের মেয়েটির ছবি যেন সেই আসহায় শিশুটির চোখে দেখতে পেলাম। আমি তো পিতা। এক মুহুর্তের জন্য মনে হল যেন পৃথিবীর সকল শিশুই আমার সন্তান।
কি করে মানুষ এসব নিষ্পাপ শিশুদের এভাবে ফেলে যেতে পারে?
তাদেরকে বিদায় জানিয়ে আমি গাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। কিছু দূর গিয়ে একবার পেছন ফিরে দেখলাম তারা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে আমার পথের দিকে, আমি মুখ ফিরাতেই ছোট দুটি হাত নাড়িয়ে টাটা দিল আমায়, আমিও হাত নাড়ালাম। ভাবলাম এরা কত কৃতজ্ঞ।
গাড়ীর কাছে এসেই দেখলাম ততক্ষনে গাড়ি ঠিক হয়ে গেছে, তাই গাড়িতে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্য আবার রওয়ানা হলাম।
ঢাকায় গিয়ে সব কাজ সারতে আমাদের তিনদিন লেগে গেল। তাই আবার ৪র্থ দিনে সকাল ৭ টায় বাড়ির উদ্দেশ্যে গ্রামীন ট্রাভেলস এর গাড়িতে উঠলাম। আসার পথে যেন আবার তাদেরকে দেখতে পায় সেই আশায় এবার গাড়ির বাম পার্শের শিট নিয়েছিলাম।
মেইল গাড়ি কোথাও দাঁড়ায় না, তার পরও সুপারভাইজারকে অনুরোধ করেছিলাম সেই বেড়িবাধের কাছে গাড়ি দাঁড় করাতে পাঁচ মিনিটের জন্য। আমার কাকুতি মিনতি দেখে গাড়ি দাঁড় করানো হয়েছিল।
আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গেলাম সেই কুড়ে ঘরটির দিকে, কিন্তু একি, তার কোন চিহ্নই নাই। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ঘরটি, শুধু কিছু ছাই পড়ে আছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকে পারছিলাম না, মাথা ঘুরে পড়ে জাচ্ছিলাম। তাই বসে পড়লাম নিজের অজান্তেই। সেই ছাই ছুয়ে বললাম আমি তোমাদেরকে শেষ পযর্ন্ত রক্ষা করতে পারলাম না। ক্ষমা করে দিও তোমারা আমায়।
গাড়ির সকল যাত্রিরা রাগারাগি করছিল তাই চোখের পানি মুছতে মুছতে গাড়ির দিকে ফিরে এলাম।
এখুনও মনে হলে দুচোখ গড়িয়ে আসে দুই ফোটা অশ্রু।ভাবি পৃথিবীতে মানুষের দেওয়া ক্ষমতা পেয়ে আমরা কত নির্লজ্জ হলে তবেই এমন একটি পথ শিশুর ঘর পোড়াতেও কুন্ঠাবোধ করি না

শিক্ষাঃ
১। যদি অন্যায় দেখতে পাও, প্রথমে হাত দ্বারা প্রতিবাদ কর, হাতে না পারলে, মুখে প্রতিবাদ কর, তাও না পারলে, অন্তরে ঘৃনা কর।
২। দুঃখী দেখলে একটু হলেও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিও।

মহান সকলের মঙ্গল করুন- আমীন।




মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।