1.কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয়?  সূচনাঃ-      কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খেলে কি হয় জানতে হলে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাঁঠাল ও কোকাকোলার মধ্যে কী কী আছে? তাই চলুন নিচের টেবিল থেকে প্রথমে আমরা জেনে নিই, কাঁঠালের মধ্যে কী কী আছে।  প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)- কাঁঠাল এর পুষ্টিমান  শক্তি ৩৯৭ কিজু (৯৫ kcal)                                                       শর্করা চিনি ১৯.০৮ g খাদ্য তন্তু ১.৫ g স্নেহ পদার্থ ০.৬৪ g প্রোটিন ১.৭২ g                                                       ভিটামিন ভিটামিন এ সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন লুটিন জিয়াক্সানথিন ১% - ৫ μg১% ৬১ μg - ১৫৭ μg থায়ামিন (বি ১) ৯%- ০.১০৫ মিগ্রা রিবোফ্লাভিন (বি ২) ৫%- ০.০৫৫ মিগ্রা নায়াসিন (বি ৩) ৬%-০.৯২ মিগ্রা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫ ) ৫%-০.২৩৫ মিগ্রা ভিটামিন বি ৬ ২৫%-০.৩২৯ মিগ্রা ফোলেট (বি ৯) ৬%-২৪ μg ভিটামিন সি ১৭%-১৩.৮ মিগ্রা ভিটামিন ই ২%-০.৩৪ মিগ্রা                                                           খনিজ ক্যালসিয়াম ২%-২৪ মিগ্রা লৌহ ২%-০.২৩ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম ৮%-২৯ মিগ্রা ম্যাঙ্গানিজ ২%-০.০৪৩ মিগ্রা ফসফর

বিবাহ প্রথা ...

বলেন, কবুল। কাজী সাহেবের কথার উত্তর বের হয় না মেয়ের মুখ থেকে। কথার বদলে ঘোমটার আড়াল থেকে হাতের ওপরে টপটপ করে পানি ঝরতে দেখা যায়। বোঝা যায়, কনে কাঁদছে। কাজী সাহেব আবার বলেন, বলেন মা কবুল। সবাই কান খাঁড়া করে থাকে। মেয়ে কবুল বলছে কিনা। মা, ভাবী, ননদ, পাড়াপড়শি নারীকূল সবাই মিলে কনেকে বলতে থাকে, ‘বল মা কবুল, বল।’ অবশেষে আরো খানিক চোখের পানি ঝরিয়ে  লজ্জার মাথা খেয়ে মেয়েটি বলল কবুল। সবাই বলে ওঠেন আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিম বিয়ের রীতিতে সবচেয়ে ক্লাইমেক্স বোধহয় এটাই। এত আয়োজন, আত্মীয়-স্বজনের আনন্দ, খাওয়া-দাওয়ার জৌলুস— সবকিছুর কেন্দ্রে দুটি ছেলে-মেয়ের ধর্মীয়ভাবে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। ছেলে-মেয়ের কাছে এরচেয়ে রোমান্টিক আনন্দের মুহূর্ত আর হয় না।
 
একটি বিয়ের জন্য কত প্রস্তুতি; কত স্বপ্ন যে মিশে থাকে। মা-বাবার এক রকম আবেগ, ভাই-বোনদের আবেগ ভিন্ন আর বর কনের কথা না হয় বাদই দিলাম। তারাই এ আয়োজনের প্রধান দুই চরিত্র। বিয়ে ছেলে-মেয়ের মনে এমন এক রোমান্সের জন্ম দেয়; যা তাদের কল্পনার আবেশে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের কথায়— সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব, কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে হূদয় দিয়ে হূদি অনুভব’।
 
বিয়ে আমাদের সমাজের সবচেয়ে আনন্দমুখর ঘটনা। দুটি ছেলে-মেয়ের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে দুটি পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সম্মিলনের এমন সামাজিক উত্সব আর নেই। এ উপমহাদেশে দুটি ছেলে-মেয়ের বিয়ের পাকা কথার সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় আনন্দ আয়োজন। প্রথমে এনগেজমেন্ট, এরপর গায়ে হলুদ তারপর বিয়ে। সবশেষে বউভাত দিয়ে শেষ হয় বিয়ের অনষ্ঠান। এ সবরে ফাঁকে আরো কত শত আচার যে রয়েছে তার শেষ নেই। যেমন বর যখন আসে তখন গেট ধরার রেওয়াজ রয়েছে। রয়েছে বিয়ের পরে মুখ দেখানোর রেওয়াজ। এত দিনের আনন্দের পর মেয়েকে বিদায় দেয়ার সময় মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের কান্না দুঃখের আবহ তৈরি করে। এ যাত্রা আনন্দের যাত্রা, একইসঙ্গে অপরিচিত পরিবিশে একটি মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ যাত্রাও।
 
বিয়ে যখন উত্সব
 
ছেলে-মেয়ের বিয়ের পাঞ্জাবি কেমন হবে, হলুদে মেয়ের সাজ, হলুদে আসা মেয়েদের অনুষ্ঠানের থিম রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি দেয়ার চল হয়েছে এখন। হলুদের স্টেজ, হলুদে গানের রিহার্সাল তো শুরু হয়ে যায় ১০ দিন আগে থেকেই। গায়ে হলুদের পরে ডিজে পার্টির চল হয়েছে এখন। হলুদের পরেই আসে বিয়ে। মেয়ের পোশাক, ছেলের পাঞ্জাবি, শেরওয়ানির ডিজাইন, মেয়ের শাড়ির রং কি হবে এ নিয়েই তো আলোচনা চলে দুই সপ্তাহ। এরপর মার্কেটে মার্কেটে ঘোরা। পছন্দের শাড়ি আর মেলে না। যদিও মেলে এরপর তার সঙ্গে ম্যাচিং গয়না খোঁজা চলে আরো কিছুদিন। এ সবের পাশাপাশি রয়েছে বিয়ের কার্ড। কার্ড যেন বিয়ের সমস্ত বিয়ের পরিবারের রুচির ছাপ নিয়ে আত্মীয়দের সামনে হাজির হয। তাই কার্ডটি হওয়া চাই স্পেশাল। এরপর রয়েছে বিয়ের দিন খাবারে মেন্যু আর ছেলে পক্ষের বউ ভাতের অনুষ্ঠানের খাবার নির্বাচন। আয়োজন কি আর কম। এ সব তো গেল কিন্তু বিয়ে তো হবে একদিন। কিন্তু সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে হবে জন্ম জন্মান্তরের জন্য। সেজন্য চাই বিয়ের এলবাম। ওয়েডিং ডায়েরি করবার জন্য এখন বিশেষ ফটোগ্রাফাররাও তৈরি হয়ে রয়েছে। শুধু আপনার ডাক দেবার অপেক্ষা। বিয়ের অনুষ্ঠানের জৌলুস দিন দিনে এমন বাড়ছে যারা দুই দশক আগে বিয়ে করেছেন তাদের তো রীতিমত হাপিত্যেশ করতে শোনা যায়। ইশ, আমাদের সময় যদি এ সব আয়োজন থাকত। কিন্তু হায় তা হবার কী আর উপায় আছে!
 
সামাজিক বন্ধন
 
বিয়ে শুধু আমাদের সমাজেই নয়; সব দেশে সব সমাজেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিয়েকে ঘিরে দুটি মানুষের মধ্যে যে সম্পর্কের সূচনা হয় তার সঙ্গে অন্য কোনো সামাজিক বন্ধনের তুলনায় হয় না। কিন্তু এ বিয়ের মূল উদ্দেশ্য কী? বিয়ে কেন হয়? বিয়ের প্রয়োজনীয়তাই বা কেন? ধর্ম মতে, যখন থেকে মানুষের সৃষ্টি তখন থেকেই বিয়ে প্রথার চালু। তবে, নৃবিজ্ঞানীদের মতে, অতি আদিমকালে বিয়ে বলতে কিছু ছিল না। কালক্রমে সামাজিক প্রয়োজনে ও শৃঙ্খলা বিধানে বিয়ে প্রথা চালু হয়।
 
বিয়ে নিয়ে অনেক মজার মজার কৌতুক প্রচলিত রয়েছে। বিয়ের ক্ষণস্থায়িত্ব নিয়ে এমন এক কৌতুক রয়েছে। এক চিত্রতারকা ঘন ঘন স্বামী বদলাতেন। একবার নতুন স্বামী নিয়ে এসে তিনি আগের কোনো পক্ষের সন্তানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সন্তানটি ছুটে গিয়ে অটোগ্রাফ বই নিয়ে এসে নতুন বাবাকে বলল, জলদি একটা সই দিন। কবে আবার হুট করে বাতিল হয়ে যাবেন সই নেয়ার সময় পাব না।
 
আরেকটি কৌতুক এমন- ঘন ঘন বিয়ে করা এক তারকা সদ্যবিবাহিত স্বামীর ঘরে এসে দেখলেন সবকিছু তার চেনা চেনা লাগছে। তিনি স্বামীকে জিগ্যেস করলেন, আচ্ছা, তোমার সঙ্গে কি আমার আগেও বিয়ে হয়েছিল?
 
এই ক্ষণস্থায়ী ও বহু বিয়ে নিয়ে যেমন অনেক কথা রয়েছে এর বিপরীতে রয়েছে সম্পর্কের চিরস্থায়ী বন্ধনে বিশ্বাস। ইসলাম ধর্মে বিয়ে অত্যন্ত পবিত্র সম্পর্ক হিসেবে বলা হয়েছে। হিন্দু সমাজে বিয়ে হচ্ছে জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন। সাধারণভাবে বললে, বিয়ে হচ্ছে সন্তান জন্ম দেয়ার মধ্যদিয়ে মানুষ সৃষ্টির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
 
বিয়ে সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। এ প্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে প্রধানত ধর্ম। বিয়ে নিয়ে জারি করা হয়েছে রীতিনীতি ধর্মীয় অনুশাসন। বৈদিক যুগ থেকেই বিয়ে নারী-জীবনের প্রধান প্রাপ্তি ও পরম সার্থকতা বলে বিবেচিত।  ইসলাম ধর্মে বিবাহ একটি আইনগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধান। ইসলামে বিবাহ বলতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও ধর্মীয়ভাবে নির্ধারিত একটি চুক্তি বোঝায়। এই চুক্তির মাধ্যমেই একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। মুসলিম বিবাহের চুক্তিপত্রে (যা কাবিননামা নামে পরিচিত) উল্লেখ করতে হয় বরের পক্ষ থেকে স্ত্রীকে দেয়া মোহরানার পরিমাণ। স্ত্রীকে দেয়া অর্থকে বলা হয় দেনমোহর। তাত্ক্ষণিকভাবে দেনমোহর পরিশোধ স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক যদিও স্ত্রী এ দায়িত্ব থেকে স্বামীকে স্বেচ্ছায় মওকুফ করে দিতে পারেন বা পরে দেয়ার অনুমতি দিতে পারেন। মুসলিম আইন অনুসারে দেনমোহর হচ্ছে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার।
 
বিয়েতে পণপ্রথা হিন্দু ধর্মে একটি স্বীকৃত রীতি। বর্তমানে যৌতুক একটি বড় সামাজিক ব্যাধি। বাংলার হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল। ১৮৭২ সালে হিন্দু বিবাহ আইন পাস হলে বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ১৪ এবং ছেলেদের ১৮ ধার্য করা হয়েছিল।
 
বহুবিবাহ প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে প্রচলিত ছিল। তবে, ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, ধনী মুসলমান পরিবার ছাড়া সকল পরিবারে দ্বিতীয় স্ত্রী বিরল। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ একটি মাইলফলক। এতে পুরুষের বহুবিবাহের প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ছিল। পারিবারিক আইনে যখন দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন হয় তখন থেকে দ্বিতীয় বিয়ের হার কমতে থাকে।
 
হিন্দুবিবাহ একটি ধর্মীয় আচারিক বা আধ্যাত্মিক বিষয় এবং এ জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক লিখিত দলিলের প্রয়োজন হয় না। হিন্দু পরিবারে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা কয়েকদিন ধরে চলে। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানগুলো ছিল: শুভদৃষ্টি, মাল্যদান, মন্ত্রপাঠ, যজ্ঞসম্পাদন, কন্যাদান, অগ্নিপ্রদক্ষিণ, সপ্তপদীগমন এবং স্বস্তিবচন। হিন্দু সমাজে পাত্র-পাত্রীর কোষ্ঠী বিচার করে দেখার রীতি আছে। যদিও আধুনিক ছেলে-মেয়েরা এগুলো এখন খুব একটা মানে না।
 
বিয়ের খাবার
 
বিয়ের খাবারের লোভ সামাল দেয়া মুশকিল। অসুস্থ মানুষও ‘এই একদিন খাই; বলে পাত পাড়েন বিয়ের অনুষ্ঠানে।’ আগের দিনে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে মেঝেতে বসিয়ে কলাপাতায় খেতে দেয়া হতো। একদিকে থাকত লবণ আর লেবু। কলাপাতার বাইরে পানির জন্য মাটির গ্লাস আর দই ও ক্ষীর দেয়ার বাটি। ভোজনপর্ব শুরু হতো গরম লুচি, বেগুন পটল ভাজা, এরপরে আসত কুমড়ার ছক্কা, শীতকালে বাঁধাকপির তরকারি, ডাল, ধোঁকা, আলুর দম, মাছের কালিয়া, চাটনি, পাঁপড় ভাজা, মিষ্টি। মিষ্টিরও ছিল নানা রকমফের। অবস্থাপন্ন বাড়িতে যুক্ত হতো পোলাও, মাংস। মেয়েদের খাওয়ানো হতো আলাদা স্থানে। সেখানে পরিবেশনও করত মেয়েরা। আর এ সময় বাড়ির কর্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন সবার পাতে খাবার ঠিকমত পড়েছে কিনা। সবাই খেয়ে শান্তি পেয়েছেন কি না। আর মুসলিমদের বিয়েতে পোলাও, বিরিয়ানি, বোরহানি, চিকেন সবজি, চাটনি, দই মিষ্টি এসব খাওয়ানোর চল বেশ আগে থেকেই।
 
দেশে দেশে বিয়ে
 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সমাজে বিয়ের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রীতি। কখনো এক সমাজের বিয়ের রীতি অন্য সমাজের বিপরীত। কোনো সমাজের বিয়ের রীতি আবার আরেক সমাজে হাসির কারণ।
 
বাংলাদেশ: বাংলাদেশে ঘটক ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার চল রয়েছে তবে, মেয়ের বাড়ি থেকে প্রস্তাব যাওয়ার চল খুব কম। আগে থেকে ইতিবাচক ইশারা না পেলে সাধারণত মেয়ের বাড়ি থেকে প্রস্তাব যাওয়ার চল নেই। ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়িতে এসে নানাভাবে মেয়েকে প্রশ্ন করার চল রয়েছে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে। যেটা আধুনিক শিক্ষিত পরিবারে অনেকটা কমে এলেও সাধারণ পরিবারগুলোতে এভাবে মেয়ে দেখানো ও তাকে প্রশ্ন করার চল রয়েছে। তবে, যৌতুক প্রথা আইনিভাবে নিষিদ্ধ হলেও সামাজিকভাবে যৌতুক প্রথা দূর হয়নি।
 
ফ্রান্স: সাদা রং ফ্রান্সের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান রং। সাজগোজের অলঙ্কার, ফুল, কনের কাপড় সবই সেখানে সাদা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, ফরাসিদের চোখে বিয়ে হচ্ছে শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক।
 
যুক্তরাজ্য: পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ-রীতির বিয়ে অনুষ্ঠানে কনে পদ্মফুল হাতে রাখে। ব্রিটিশদের চোখে এই ফুল সৌভাগ্যের প্রতীক। ব্রিটিশদের বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণত দুপুরে আয়োজিত হয়। তাদের বিয়ের কেক তৈরিতে নানা রকম ফল ব্যবহার করা হয়। এ কেককে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়।
 
গ্রিস: এ দেশে কনেরা নিজের হাত মোজার ভেতরে কিছু মিষ্টি ক্যান্ডি রাখে। এ ব্যতিক্রমী ঘটনার কারণ, নিজের বিবাহিত জীবনকে আরো মধুর করে তোলা। এছাড়া গ্রিকরা ঐতিহ্যবাহী রাউন্ড ডান্সের গোলাকার নৃত্যের মাধ্যমে বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায়।
 
কঙ্গো: বিয়ের দিন যখন চারিদিক আনন্দমুখর হয়ে থাকবে, তখন বর কিংবা কনের মোটেও হাসা চলবে না। নিজেদের আনন্দকে গোপন রেখে তাদের অবশ্যই গাম্ভীর্য ধরে রাখতে হবে। যদি পুরো অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনো সময় বর কিংবা কনে হেসে দেয় তবে ধরে নেওয়া হয় তারা বিয়ের ব্যাপারে একনিষ্ঠ নয়।
 
চীন: কনের পরিবার একজন সৌভাগ্যবতী মহিলাকে ভাড়া করবে কনেকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য, এটি চীনে বিয়ের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। শুধু এটুকুই নয়, কনে যাবে সুসজ্জিত পালকিতে চড়ে এবং তার পরিচারিকারা একপ্রকার হালকা ছাতার সাহায্যে তাকে ঢেকে রাখবে এবং কিছু পরিচারিকা পালকিতে চাল ছিটাবে। ট্র্যাডিশনাল চীনা মানুষেরা এই রীতিকে সুস্বাস্থ্য ও সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে।
 
জার্মানি: বর এবং কনের প্রথম গৃহস্থালী কাজ হবে ভাঙা চীনামাটির বাসনের স্তূপ পরিষ্কার করা, যা বিয়ের দিন উপস্থিত অতিথিরা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে। মনে করা হয় এটি নববিবাহিতদের খারাপ আত্মার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে। এছাড়াও এটি নববিবাহিতদের একসাথে কাজ করা এবং যে কোনো সমস্যা একসাথে মোকাবেলা করা শেখায়।
 
জাপান: জাপানে বিয়েতে কনেরা ঐতিহ্যবাহী ‘শিনতো’ অনুষ্ঠানে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সাদা পোশাক পরিধান করে থাকে। এমনকি তাদের মেকআপও হবে সাদা। ঐতিহ্যবাহী কিমোনো পোশাকের সাথে তারা মাথায় সাদা রঙের হুড পরিধান করে। সাদা রঙ কনের মনের শুভ্রতা প্রকাশ করে এবং মাথার হুড কনের কথিত ‘হর্ন অফ জেলাসি’ অর্থাত্ ‘হিংসের শিং’ ঢেকে রাখে যা তারা তার শাশুড়ির প্রতি অনুভব করে।
 
রাশিয়া: নববিবাহিত রাশিয়ান দম্পতিদের একপ্রকার মিষ্টি জাতীয় রুটি খেতে দেওয়া হয় যা গম থেকে তৈরি। বর অথবা কনের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় রুটির অংশটি খেতে পারবে তাকেই বাড়ির কর্তা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। এ দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী ও স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে চুমু খাবে। শুধু একবার নয় অনুষ্ঠান চলার সময় বহুবার। তাদের ধারণা বিয়ের সময় যত চুমু খাবে তাদের সম্পর্ক ততই মধুর হবে।
 
পাকিস্তান: কনের বোন এবং মেয়ের বন্ধুরা বরের জুতো নিয়ে লুকিয়ে রাখে, যদি বর তার জুতো ফেরত চায় তবে তাকে একটি মোটা অংকের টাকা দিয়ে জুতো জোড়া ফেরত নিতে হবে, নয়ত খালি পায়েই তাকে পুরো বিয়ের অনুষ্ঠান পার করতে হবে। বলা বাহুল্য আমাদের দেশেও এই রীতিটি কম বেশি প্রচলিত আছে।
 
ফিলিপাইন: বিয়ের অনুষ্ঠানে ফিলিপিনো নবদম্পতিরা একজোড়া কবুতর উড়িয়ে দেয়, যার একটি মেয়ে ও অন্যটি ছেলে। নবদম্পতির জন্য এই কবুতর জোড়া তাদের বিবাহিত জীবনের শান্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
 
ভেনেজুয়েলা: বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বর ও কনের সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করা একদমই বৃথা, কারণ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই বর ও কনে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে কারও কাছে ধরা না পড়ে এভাবে পালিয়ে যাওয়াকে সৌভাগ্য হিসেবে ধরা হয়। আর যে ব্যক্তি তাদের অনুপস্থিতি প্রথম ধরতে পারবে তার জন্যও এটি সৌভাগ্যের প্রতীক।
 
পেরু: পেরুতে বিয়ের জন্য তৈরি বিশেষ কেকে একটি নকল বিয়ের আংটি দেয়া থাকে। কেক পরিবেশনের সময় যে আংটিসহ কেকের অংশটি পাবে তাকে সৌভাগ্যবান মনে করা হবে এবং ধারণা করা হয় পরবর্তী বিয়েটি তারই হতে যাচ্ছে।

( আসিফুর রহমান সাগর)
ইত্তেফাক/আরকেজি

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিধাতা রাখিও তাঁরে সুখে।